
ছবি: সংগৃহীত
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আন্দোলন জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী রোববার (১ জুন) এবং সোমবার (২ জুন) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম ও সংযুক্ত পরিষদ। একইসঙ্গে আন্দোলনকারীরা আগাম ঘোষণা দিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে ৩১ মে’র পর থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন শেষে আয়োজিত এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি নুরুল ইসলাম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ফোরামের আরেক কো-চেয়ারম্যান বাদিউল কবিরসহ সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
নুরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের প্রধান দাবি হলো ২০২৫ সালের ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ’ অবিলম্বে বাতিল করা। এই দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা উপদেষ্টাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের পথ বেছে নিয়েছি।”
তিনি জানান,
রোববার (১ জুন) স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হবে—
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার,
সড়ক, সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির খান, এবং
পরিবেশ উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান—এদের প্রত্যেকের কাছে।
সোমবার (২ জুন) স্মারকলিপি প্রদান করা হবে—
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুইয়ার কাছে।
নেতারা জানান, সরকারের উচ্চপর্যায়ে সরাসরি বার্তা পৌঁছাতে তারা এই পথ বেছে নিয়েছেন এবং আশা করছেন, উপদেষ্টারা তাদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা অনুধাবন করে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।
নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রতিদিন সচিবালয়ে এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করছি। এই কর্মসূচি চলবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত।” তিনি আরও বলেন, শুধু সচিবালয় নয়, এই কর্মসূচি এখন সারাদেশব্যাপী বিস্তৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মাঠপর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কার্যালয়সহ সরকারি প্রশাসনের সব স্তরে একযোগে এই কর্মবিরতি পালিত হচ্ছে। এতে সারা দেশের সরকারি দপ্তরে কর্মদৈনন্দিন কার্যক্রমে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ‘সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮’ সংশোধন করে নতুন একটি অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে ২৫ মে রোববার সন্ধ্যায় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারি করে।
এই অধ্যাদেশে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে যেগুলো নিয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তীব্র আপত্তি তুলেছেন। তাদের প্রধান অভিযোগ—
চাকরিজীবীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে,
সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও বহিষ্কার সংক্রান্ত বিধানগুলোর মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে,
অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে।
কর্মচারীরা অভিযোগ করছেন, এ ধরনের বিধান গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী এবং প্রশাসনের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করবে। তারা মনে করছেন, এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে এবং প্রশাসনের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়বে।
ঐক্য ফোরামের নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, “যদি সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নেয় এবং এই অধ্যাদেশ বাতিল না করে, তাহলে ৩১ মে’র পর থেকে আমরা আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবো। সেই কর্মসূচিতে একাধিক দিনব্যাপী ধর্মঘট ও সচিবালয় অবরোধও থাকতে পারে।”
বাদিউল কবির বলেন, “আমরা কোনো সংঘাত চাই না, তবে যদি আমাদের কথা কেউ না শোনে, আমাদের বাধ্য হয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। আমরা দেশপ্রেমিক, আমরা শুধু আমাদের যৌক্তিক অধিকার চাই।”
সরকারি চাকরির নীতিমালায় পরিবর্তনের বিরোধিতা করে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই আন্দোলন শুধু একটি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে নয়, বরং সরকারের নীতিনির্ধারকদের প্রতি একটি বড় বার্তা—প্রশাসনের চালিকাশক্তি হিসেবে যারা কাজ করেন, তাদের অভিমত ও সম্মান উপেক্ষা করলে সার্বিক শাসনব্যবস্থাই অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও বিশ্লেষকদের মতে, চলমান আন্দোলনকে অবমূল্যায়ন করলে এর প্রতিক্রিয়া হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি ও প্রশাসনিকভাবে বিপজ্জনক। এখন দেখার বিষয়, সরকার আলোচনার পথে হেঁটে সমাধানে পৌঁছায়, নাকি পরিস্থিতি আরও জটিল রূপ নেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ