
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ইতিহাসে কুখ্যাত নাম হিসেবে পরিচিত সুব্রত বাইন ওরফে মো. ফাতেহ আলী (৬১) এবং তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ তিনজনকে রাজধানীর আদালতে তোলা হলে, আদালত তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ দেন। গতকাল বুধবার (২৮ মে) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এতে সুব্রত বাইনকে আট দিনের এবং মোল্লা মাসুদসহ অপর দুজনকে ছয় দিনের রিমান্ডে নিতে অনুমতি দেওয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাতিরঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিয়াদ আহমেদ অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের একটি মামলায় গ্রেপ্তারকৃত এই চারজনের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক কিছুটা কাটছাঁট করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এই আসামিরা বাংলাদেশের কুখ্যাত অপরাধচক্র ‘সেভেন স্টার গ্রুপ’-এর সক্রিয় সদস্য। ২০০১ সালে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করে, তাতে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের নাম সবার উপরে ছিল। তাদের ধরিয়ে দিতে তখন সরকার মোটা অঙ্কের পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটির নেতৃত্বে থাকা সুব্রত বাইন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুন, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও দস্যুতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। সেসময় সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কৌশলে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তিনি। পরবর্তীতে ফেক পাসপোর্টে ভারতীয় নাগরিক পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করতে থাকেন এবং সেখান থেকেই সংগঠিত করেন সন্ত্রাসী কার্যক্রম।
তদন্ত কর্মকর্তারা আদালতে জানান, সুব্রত বাইন এবং মোল্লা মাসুদ একাধিক হত্যা, অস্ত্র ও সন্ত্রাসবাদ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ছিলেন। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে দেশের বিভিন্ন কারাগার থেকে শত শত সাজাপ্রাপ্ত বন্দির সঙ্গে তারাও ছাড়া পেয়ে যায়। এরপর গা-ঢাকা দিয়ে ফের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠে তারা।
রিমান্ড আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, তারা কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পুরনো নেটওয়ার্ক পুনর্গঠন শুরু করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী দমন ও আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালায়। গোপন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক করে এবং তাদের কাছ থেকে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
আদালতে রিমান্ড শুনানির সময় বিচারক বলেন, দেশের জন্য দীর্ঘদিন ধরে হুমকি হয়ে থাকা এমন অপরাধীদের পুনরায় সক্রিয় হয়ে ওঠা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের পেছনের নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
আদালতের রিমান্ড আদেশের পর তদন্ত কর্মকর্তা জানান, তারা রিমান্ড চলাকালে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের বর্তমান যোগাযোগ, অস্ত্র সরবরাহের উৎস, অর্থের যোগান এবং তাদের বাহিনীর নতুন সদস্যদের তালিকা সংগ্রহে কাজ করবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ