
ছবি: সংগৃহীত
রাজনীতিতে তরুণদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে বিএনপির অঙ্গসংগঠনসমূহের আয়োজিত যুব সমাবেশে ঢল নেমেছে নেতাকর্মীদের। আজ (মঙ্গলবার) দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্ধারিত সমাবেশ শুরুর আগেই রাজধানীসহ সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও ঢাকার বিভিন্ন জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা এসে পৌঁছান। সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল, স্লোগান, দলীয় পতাকা আর বাদ্যযন্ত্রের তালে নয়াপল্টন রূপ নেয় প্রাণোচ্ছ্বল রাজনৈতিক মঞ্চে।
‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করো’— এই মূল স্লোগানকে সামনে রেখে সমাবেশের পুরো এলাকাজুড়ে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদল এই সমাবেশের আয়োজন করে। শুরু থেকেই নয়াপল্টন ও আশপাশের সড়কগুলোতে মানুষের ঢল নামে। রাস্তার দুই পাশে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়, যেন সমাবেশ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।
নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যায় বিএনপির পতাকা, দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি সংবলিত ফেস্টুন ও ব্যানার। কেউ টি-শার্টে দলের লোগো ছাপিয়ে এসেছেন, কারও বা মাথায় জাতীয় পতাকা ও দলীয় রঙে সাজানো ফিতা বাঁধা। স্লোগানে স্লোগানে তারা জানান দিচ্ছেন তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্বের। কেউ কেউ বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে নেচে-গেয়ে যোগ দিচ্ছেন মিছিলে, যেন এটা শুধুই রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনের এক সাংস্কৃতিক মহড়া।
সমাবেশের প্রারম্ভিক পর্যায়ে ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহিয়া বলেন, “তরুণ প্রজন্ম আজ রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি বঞ্চিত। তারা ভোট দিতে পারে না, মতপ্রকাশ করতে পারে না। আমরা কোনো রাজনৈতিক মতকে জোর করে চাপিয়ে দিতে চাই না, বরং তরুণরা যেন মুক্তভাবে তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা করতে পারে— সেটাই আমাদের দাবি।”
তিনি আরও বলেন, “এই সমাবেশ আমাদের দীর্ঘ হাহাকার, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংবিধানিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি। আজ যারা এখানে এসেছে, তারা জানে— রাজনীতির সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকলে রাষ্ট্র কেবল শাসন যন্ত্রে পরিণত হয়, গণতন্ত্রে নয়।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য। রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই চলেছে মিছিল ও সমাবেশ। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
সমাবেশে তরুণ নেতারা রাজনৈতিক স্বাধীনতার সংকোচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে তরুণদের রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন করছে, কারণ রাজনৈতিকভাবে সচেতন ও সংগঠিত একটি প্রজন্ম সরকারকে জবাবদিহিতে বাধ্য করবে।
অন্য এক বক্তা বলেন, “বর্তমান বাস্তবতায় তরুণদের রাজনৈতিক অধিকার সবচেয়ে বেশি বিপন্ন। একটি প্রজন্ম ভোট দিতে পারল না, মতপ্রকাশ করতে পারল না, রাজনীতিতে যোগ দিতে পারল না— এ রাষ্ট্র কীভাবে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখবে?”
বিকেলে মূল সমাবেশ শুরু হলে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা। তাদের বক্তব্যে উঠে আসবে তরুণদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, রাজনৈতিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি।
এই যুব সমাবেশকে ঘিরে বিএনপি আশা করছে, তারা নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে সক্ষম হবে এবং সরকারের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা দিতে পারবে যে— তরুণদের দাবি দমন করা সহজ নয়।
নয়াপল্টনে আজকের এই ঢল বিএনপির জন্য কেবল একটি কর্মসূচি নয়, বরং এটি একটি প্রতীক— প্রতিরোধ, প্রত্যাশা ও পুনর্দাবির। তা হলেই রাজনৈতিক পরিবর্তনের সম্ভাবনা নতুন করে আলো দেখবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ