
ছবি: সংগৃহীত
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদ। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে প্রধান উপদেষ্টা বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরার পর, ৩১ মে’র পর। তখনই নির্ধারিত হবে অধ্যাদেশটি বাতিল হবে কি না, কিংবা কর্মচারীদের দাবি মেনে সংশোধনের কোনো পথ খোলা থাকবে কি না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবের এমন আশ্বাসের ফলে আপাতত কর্মসূচি একদিনের জন্য স্থগিত করেছে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তবে তারা জানিয়েছেন, দাবি না মানা হলে ভবিষ্যতে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
বুধবার (২৮ মে) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সচিব কমিটির আহ্বায়ক ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এএসএম সালেহ আহমেদ। সাক্ষাতের পর সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, আন্দোলনরত কর্মচারীদের দাবিগুলো তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে অবহিত করেছেন।
তিনি বলেন, “গতকাল কর্মচারীরা যেসব আপত্তি জানিয়েছেন, সেগুলো আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা ৩১ মে জাপান থেকে দেশে ফিরবেন। এরপর সচিব কমিটির সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে তিনি প্রধান উপদেষ্টাকে সব বিষয়ে অবহিত করবেন। এরপরই সিদ্ধান্ত হবে।”
ভূমি সচিব আরও বলেন, “আমরাও সরকারের কর্মচারী। বিষয়টি যেহেতু নীতিনির্ধারণী, তাই সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই সিদ্ধান্ত আসতে হবে। আমরা শুধু তথ্য-উপাত্ত ও বাস্তবতা উপস্থাপন করেছি।”
এই সাক্ষাতের আগেই মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সচিবদের মধ্যে একটি জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কর্মচারীদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার জন্য একটি ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। ভূমি সচিব সালেহ আহমেদকে এই কমিটির নেতৃত্ব দেন।
এরপর বিকেল পৌনে ৩টায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সচিবালয়ের আন্দোলনরত কর্মচারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। এতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও। আলোচনার প্রেক্ষিতে একদিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন কর্মচারীরা।
আন্দোলনরত কর্মচারীরা দাবি করেছেন, ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ একটি কালাকানুন এবং এটি সরকারের চরম কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের প্রতিফলন। তারা অভিযোগ করছেন, ১৯৭৯ সালের যেই বিধান দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করেছিলেন, বর্তমান সরকার সেই বিধানকেই নতুন করে ফিরিয়ে এনেছে।
তাদের ভাষায়, “এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রতিকারহীন শাস্তির মুখে পড়তে হবে সাধারণ কর্মচারীদের। তাদের চাকরির নিরাপত্তা থাকবে না। এটি একটি ভয়ংকর ব্যবস্থা।”
তারা আরও বলেন, “এই অধ্যাদেশে কোনো স্বচ্ছতা নেই, অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষতা নেই, অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও চাকরি হারানোর ঝুঁকি থাকবে। ফলে এটি স্পষ্টভাবে কর্মচারীদের অধিকার খর্ব করে।”
মঙ্গলবার আন্দোলনকারীরা একদিনের জন্য কর্মসূচি স্থগিত করলেও তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
কর্মচারীরা বলেন, “এই অধ্যাদেশ কেউ মানবে না। প্রয়োজনে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি রুমে তালা দেওয়া হবে। আমরা যেকোনো মূল্যে এই কালাকানুন প্রতিহত করব।”
তারা আরও বলেন, “সরকার যদি আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে আন্তরিক হয়, তাহলে কর্মচারীরা সংলাপেও বসতে রাজি। কিন্তু প্রহসনমূলক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে আন্দোলন থেকে এক চুলও সরে আসা হবে না।”
বর্তমানে সচিব কমিটি আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো পর্যবেক্ষণ করছে এবং ৩১ মে’র পর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
এই পরিস্থিতিতে সচিবালয়ে উত্তেজনা কিছুটা কমলেও অনিশ্চয়তা কাটেনি। কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ আন্দোলনের হুমকি এবং সরকারের অপেক্ষাকৃত নীরব অবস্থান দুই পক্ষের মধ্যকার দূরত্ব আরও বাড়াচ্ছে।
এই সংকট কতদূর গড়াবে বা রাজনৈতিক প্রভাব কতটা পড়বে—সেই উত্তর নির্ভর করছে ৩১ মে’র পর প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের উপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ