
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আবারও আলোচনায় এসেছে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ। গেল বছর ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপেই দেশের হয়ে সবশেষ খেলেছিলেন এই ক্রিকেটার। তবে বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করেই টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে সকলকে চমকে দেন তিনি। এমনকি নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটা দেশের মাটিতে খেলার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতা ও পরিস্থিতির কারণে সেই ইচ্ছেও পূরণ হয়নি।
বিশ্বকাপ শেষে ব্যক্তিগত নানা ব্যস্ততা ও স্বাস্থ্যগত কারণে দেশে ফিরেননি সাকিব। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলের বাইরেই ছিলেন তিনি। এরপর শোনা যায়, তার বোলিং অ্যাকশনে সমস্যা ধরা পড়েছে এবং এ নিয়ে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন। ফলে জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
তবে অনেকদিন পর চলতি বছরের শুরুতে পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)-এর মাধ্যমে মাঠে ফেরেন সাকিব। বোলিং অ্যাকশন সংশোধনের পর এটিই ছিল তার প্রথম প্রতিযোগিতামূলক আসর। যদিও টুর্নামেন্টটিতে খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি এবং নিজের সামর্থ্যের প্রমাণও তেমনভাবে দিতে পারেননি।
পিএসএলে অংশ নেওয়ার পর থেকেই সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে গুঞ্জন ও আলোচনা শুরু হয়েছে ক্রিকেট অঙ্গনে। এ অবস্থায় দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশ্ন—সাকিবকে কি আবারও দেখা যাবে লাল-সবুজের জার্সিতে?
এই প্রসঙ্গে সোমবার (২৬ মে) এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার রহমান মিঠু কিছুটা আভাস দেন বোর্ডের ভাবনার। তিনি বলেন, “আমাদের যে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং টিম সেট আপ আছে, তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। অ্যাকশন শোধরানোর পর সাকিব তো এটিই প্রথম টুর্নামেন্ট খেলল (পিএসএল)। কাজেই এখনো কিছু বলার সময় আসেনি। তবে সামনে কী হয়, সেটা দেখার বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “সাকিব একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়। যে কোনো দলের জন্য সে এক বিশাল সম্পদ। আমরা তাকে জাতীয় দলে অবহেলা করছি না। সে আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট ও নির্বাচকদের বিবেচনায় সবসময়ই আছে। সুতরাং, এখনো পুরোপুরি নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না, তবে সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”
মিঠুর বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিসিবি এখনো সাকিবকে ছাড়তে রাজি নয়। তবে তার পারফরম্যান্স ও মাঠের ফিটনেস আরও কিছুদিন দেখা হবে। শুধুমাত্র পিএসএল নয়, সাকিব যদি পরবর্তী সময়গুলোতেও নিয়মিত ক্রিকেট খেলেন এবং নিজেকে প্রমাণ করেন, তাহলে আবারও জাতীয় দলে ফেরার দরজা খুলে যেতে পারে এই ক্রিকেটার জন্য।
এদিকে বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, যেহেতু সাকিব বর্তমানে কেবল ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেন, তাই আসন্ন সিরিজগুলোতে তার সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে। তবে তার মানসিক প্রস্তুতি, শারীরিক ফিটনেস এবং খেলার আগ্রহ সবকিছু মিলিয়ে বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিবের অবদান অনস্বীকার্য। তিনি দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ও অন্যতম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এছাড়া আইসিসি র্যাংকিংয়েও দীর্ঘ সময় অলরাউন্ডারদের শীর্ষে ছিলেন তিনি।
সুতরাং, বাংলাদেশের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান যে এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তা আবারও প্রমাণ হলো বিসিবির পক্ষ থেকে তার বিষয়ে সদর্থক মনোভাব প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এখন দেখার বিষয়, মাঠে তিনি কত দ্রুত নিজের পুরোনো ছন্দ ফিরে পান এবং ফের জাতীয় দলে নিজের জায়গা করে নিতে পারেন কিনা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ