
ছবি: সংগৃহীত
মঙ্গলবার গভীররাতে রাত সাড়ে দুইটার সময় দেশের রাজধানী ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও পার্শ্ববর্তী দেশের কিছু স্থানে হঠাৎ ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর বরাতে জানা গেছে, এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫.২, যা মাঝারি মানের বলে বিবেচিত। এ ধরনের কম্পন সাধারণত স্থানীয় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে, যদিও বাংলাদেশে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টা ২৪ মিনিটে এই কম্পন অনুভূত হয়। মুহূর্তের মধ্যেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে কম্পনের কথা জানানো হয়। অনেকে জানান, ঘরের দেয়াল ও জানালা ধড়মড় করে কাঁপতে থাকে, আর বাইরে রাস্তা পারাপারকারী পথচারীরা স্বাভাবিকের থেকে উদ্বিগ্ন হয়ে যান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুহূর্তেই এই খবর ছড়িয়ে পড়ে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে উত্তেজনা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের মইরাং এলাকা। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল প্রায় ৪৬ দশমিক ৬ কিলোমিটার। ভূপৃষ্ঠ থেকে এই গভীরতা মোটামুটি মাঝারি, যা কম্পনের তীব্রতা ও বিস্তৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির ভৌগোলিক অবস্থান ছিল ২৪ দশমিক ৪৯ অক্ষাংশ ও ৯৩ দশমিক ৭৮১৬ দ্রাঘিমাংশ। এই স্থানটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প ও পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কেঁপুনি মূলত ঢাকা ও তার পার্শ্ববর্তী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলা গুলোতে অনুভূত হয়েছে। এছাড়া মণিপুর থেকে ছড়িয়ে পড়ে কম্পনের প্রভাব মিয়ানমারেও ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে। তবে বাংলাদেশে এই ভূমিকম্পের ফলে এখন পর্যন্ত কোনো তীব্র ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের মণিপুর এলাকা ভূমিকম্প প্রবণ একটি অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত এবং মাঝে মাঝে এই ধরনের কম্পন অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এ ধরনের ভূমিকম্পের মাত্রা বেশি হলে তা তীব্র ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই সাধারণ জনগণকে ভূমিকম্প মোকাবিলার প্রস্তুতি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সচেতনতা অর্জন করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় প্রশাসনও রাতের সেই মুহূর্তগুলো থেকে ভূমিকম্পের তথ্য সংগ্রহ করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। তারা জনগণকে আতঙ্কিত না হয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া ভূমিকম্প সংক্রান্ত যে কোনো জরুরি তথ্য ও পরবর্তী সতর্কবার্তা সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সচেষ্ট রয়েছে।
সর্বশেষ, রাতের ওই কম্পনের ঘটনায় বাংলাদেশের কোনো বড় ধরনের অবকাঠামোগত বা মানবিক ক্ষতি না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শিথিলতা ফিরেছে। তবে ভূমিকম্পের প্রাকৃতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও জরুরি প্রস্তুতির পরিকল্পনা আরও জোরদার করার প্রয়োজনীয়তাও বিশেষজ্ঞরা তুলে ধরেছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ