
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহার ধর্মীয় উৎসব ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশকে কেন্দ্র করে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হচ্ছে দীর্ঘ ছুটি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানভেদে এই ছুটির সময়সীমা ও মেয়াদে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সার্বিকভাবে জুন মাসে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই পাঠদান বন্ধ থাকবে উল্লেখযোগ্য সময়জুড়ে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব শিক্ষা পঞ্জিকা অনুযায়ী ছুটির ঘোষণা দিয়েছে এবং সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নতুন ক্লাস শুরুর তারিখও নির্ধারণ করেছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়: ২১ দিনের ছুটি
সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর গ্রীষ্মকালীন ছুটি এবং ঈদুল আজহার ছুটি একত্রিত করে ৩ জুন থেকে ২২ জুন পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা একটানা ২১ দিনের ছুটি পাচ্ছে। তারা পুনরায় ক্লাসে ফিরবে ২৩ জুন থেকে।
প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যায়ের ছুটি মূলত শিশুবান্ধব শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রাধান্য দিয়ে নির্ধারণ করা হয়। দীর্ঘ গরমের মধ্যে ছোট শিশুদের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা কষ্টকর হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন অবকাশের সময় বাড়িয়ে ঈদের ছুটির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়: মিলছে ২৩ দিনের ছুটি
মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হচ্ছে ১ জুন থেকে। একইসঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটি যুক্ত হয়ে তারা ছুটি ভোগ করবে ১৯ জুন পর্যন্ত। এরপর ২০ ও ২১ জুন সাপ্তাহিক বন্ধ থাকার কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে ২২ জুন থেকে। ফলে এ স্তরের শিক্ষার্থীরা মোট ২৩ দিন ছুটিতে থাকবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীদের মানসিক বিশ্রাম ও পারিবারিক আনন্দ উদযাপনের সুযোগ করে দিতেই দীর্ঘ ছুটির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সরকারি-বেসরকারি কলেজ: ছুটি কম
কলেজ পর্যায়ে ছুটির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম। সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলোতে শুধুমাত্র ঈদুল আজহার ছুটি ৩ জুন থেকে শুরু হয়ে ১২ জুন পর্যন্ত চলবে। এ সময়ের মধ্যে গ্রীষ্মকালীন অবকাশের কোনো অংশ যুক্ত করা হয়নি। ফলে কলেজ শিক্ষার্থীরা মাত্র ১০ দিনের ছুটিতে থাকবেন। ১৩ জুন থেকে পুনরায় নিয়মিত পাঠদান শুরু হবে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা জাতীয় শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যে থাকে। তাই তাদের দীর্ঘ ছুটি না দিয়ে পাঠক্রম চালু রাখা অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
মাদরাসা: সর্বোচ্চ ২৫ দিনের ছুটি
মাদরাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এবারের ছুটি অন্যান্য স্তরের তুলনায় দীর্ঘ। সরকারি আলিয়া মাদরাসা এবং বেসরকারি ইবতেদায়ি, দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল স্তরের মাদরাসায় ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি একত্রে শুরু হচ্ছে ১ জুন থেকে এবং তা চলবে ২৫ জুন পর্যন্ত। পাঠদান শুরু হবে ২৬ জুন থেকে। অর্থাৎ মাদরাসা শিক্ষার্থীরা টানা ২৫ দিনের ছুটিতে যাবে।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, মাদরাসাগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শিক্ষাও চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তি ও পারিবারিক সময় উপভোগের সুযোগ দিতে এই দীর্ঘ ছুটির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: মিলছে ১৯ দিনের ছুটি
কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হচ্ছে ১ জুন থেকে, এবং চলবে ১৯ জুন পর্যন্ত। এরপর ২০ ও ২১ জুন সাপ্তাহিক ছুটির কারণে পাঠদান পুনরায় শুরু হবে ২২ জুন থেকে। ফলে এ স্তরের শিক্ষার্থীরা মোট ২১ দিনের ছুটি পাচ্ছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, প্রশিক্ষণনির্ভর এই শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘ ছুটির ক্ষেত্রে হাতে-কলমে শিক্ষার ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হতে পারে বলে অতিরিক্ত সময়ের ছুটি এড়িয়ে চলা হয়। তবে ঈদ ও গ্রীষ্মের তীব্রতা বিবেচনায় নির্ধারিত এই সময়টুকু ছুটির আওতায় আনা হয়েছে।
চলমান গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপদাহ ও মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎসব ঈদুল আজহা উপলক্ষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছুটির দীর্ঘতর সময় পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়টা শিক্ষার্থীদের মানসিক বিশ্রাম, পারিবারিক সম্প্রীতি এবং সামাজিক আচরণ শেখার এক সুযোগ হয়ে উঠতে পারে, যদি তা গঠনমূলকভাবে কাজে লাগানো হয়।
তবে একইসঙ্গে অভিভাবকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা, যাতে দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না হয়ে পড়ে। বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষার প্রস্ততিরত শিক্ষার্থীদের জন্য ঘরে বসে পাঠচর্চা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ছুটির সময়সূচি যেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরন অনুসারে ভিন্ন, তাই প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান থেকেই অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ছুটির নোটিশ দেখে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ