
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অবশেষে তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গঠিত এই কমিটি প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ, সাক্ষ্যগ্রহণ, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করে। সোমবার (২৬ মে) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের কাছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময় উপাচার্যের কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, তদন্ত কমিটির সদস্যসচিব সহকারী প্রক্টর এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শারমীন কবীর, এবং প্রশাসনের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতরের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, তদন্ত কমিটি যথাযথ প্রক্রিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করে বিস্তারিত অনুসন্ধান চালিয়ে প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে। এই প্রতিবেদনটি এখন উপযুক্ত প্রশাসনিক ফোরামে পর্যালোচনার জন্য উপস্থাপন করা হবে। পর্যালোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত বিধি ও নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৩ মে দিবাগত রাতে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। হত্যাকাণ্ডের স্থান এবং সময় পরিপ্রেক্ষিতে এই ঘটনার প্রকৃতি এবং উদ্দেশ্য নিয়ে শুরু থেকেই নানা আলোচনা ও উদ্বেগ তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ রাজনৈতিক অঙ্গনে।
শাহরিয়ারের মর্মান্তিক মৃত্যুর পরদিনই, ১৪ মে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ঘটনা তদন্তে একটি সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন। কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান। অন্যান্য সদস্যরা হলেন—সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক তৈয়েবুর রহমান, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক মো. আবুল কালাম সরকার, সহকারী প্রক্টর শারমীন কবীর (তিনি কমিটির সদস্যসচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন), এবং ডেপুটি রেজিস্ট্রার (তদন্ত) মো. আইয়ুব আলী যিনি সচিবালয় দায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে আইনজীবী ব্যারিস্টার নুরুল আজিমকে কমিটিতে কো-অপ্ট করা হয়, যিনি মামলার আইনি দিক ও জটিলতা বিশ্লেষণে বিশেষ সহায়তা দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ এই তদন্ত প্রক্রিয়ার পাশাপাশি, শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে পুলিশ এবং সিআইডিও আলাদা তদন্ত চালাচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন জমার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের দায়বদ্ধতা পূরণ করলেও, নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার এবং সহপাঠীরা দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, শাহরিয়ার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে ও দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোরতা অবলম্বন করবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট অথবা ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সভায় গৃহীত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সাম্য হত্যাকাণ্ডকে কেন্দ্র করে যে জনমত ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা বিবেচনায় নিয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোও স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। ছাত্রদলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ইতোমধ্যে ঘটনাটিকে ‘নির্মম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে আখ্যায়িত করে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে।
এই প্রতিবেদনের আলোকে এখন দেখার বিষয়—বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তের সঙ্গে সমন্বয় করে কীভাবে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হয়। সাম্য হত্যার বিচার পেতে দেশজুড়ে ছাত্রসমাজ ও শিক্ষার্থী মহলের নজর এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ