
ছবি: সংগৃহীত
দেশব্যাপী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম, নৈতিকতা, দুর্নীতিবিরোধী চেতনা এবং সাম্যের মূল্যবোধ গড়ে তুলতে প্রাত্যহিক সমাবেশে নির্ধারিত একটি শপথ পাঠ বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ বুধবার (২১ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এই নির্দেশনার মাধ্যমে সরকার চায় শিক্ষার্থীদের মনোজগতে ইতিবাচক পরিবর্তন, নৈতিক জাগরণ এবং জাতীয় সংহতির বীজ রোপণ করতে, যাতে তারা ভবিষ্যতের নেতৃত্বে সক্ষমতা অর্জন করে একটি আদর্শ, বৈষম্যহীন এবং দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, "সাম্যের বাংলাদেশ" গঠনের জন্য একটি দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক ও নৈতিকতাসম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সেই ভিত্তি, যেখানে ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা বিকাশের প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। এই প্রেক্ষাপটে জাতীয় আদর্শ ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন শপথ পাঠ করানো হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত শপথ বাক্যটি হলো:
**"আমি শপথ করিতেছি যে, মানুষের সেবায় সর্বদা নিজেকে নিয়োজিত রাখিব।
দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। দেশের একতা ও সংহতি বজায় রাখিবার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকিব।
অন্যায় ও দুর্নীতি করিব না এবং অন্যায় ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিব না।
হে মহান আল্লাহ/মহান সৃষ্টিকর্তা, আমাকে শক্তি দিন, আমি যেন বাংলাদেশের সেবা করিতে পারি এবং বাংলাদেশকে একটি আদর্শ, বৈষম্যহীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে গড়িয়া তুলিতে পারি।
আ-মী-ন।"
এই শপথের মূল প্রতিপাদ্য হলো—দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ, সমাজের প্রতি নিষ্ঠা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই শপথ পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে এক ধরনের আত্মশুদ্ধির অনুশীলন করতে পারবে। একইসঙ্গে তারা নিজেদের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং নৈতিক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন হবে। ছাত্রছাত্রীদের মানসিক গঠনে এই প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রজ্ঞাপনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, যেন তাঁরা প্রতিদিন সকালের সমাবেশে শিক্ষার্থীদের এই শপথ পাঠ নিশ্চিত করেন। এক্ষেত্রে কোনো অবহেলা বা অনুপালন পরিলক্ষিত হলে তা প্রশাসনিকভাবে আমলে নেওয়া হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “জনস্বার্থে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।” অর্থাৎ, এটি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার একটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের শপথ শিক্ষার্থীদের মানসিক গঠনে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে যখন সমাজে দুর্নীতি, অন্যায় ও সামাজিক বৈষম্য বিদ্যমান, তখন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক মূল্যবোধ গড়ে তোলার এ উদ্যোগকে সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই শপথ পাঠের প্রবর্তন শুধুমাত্র একটি আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি নয়—এটি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের নৈতিক এবং দেশপ্রেমিক মনোভাব গঠনের একটি প্রচেষ্টা। সরকারের আশা, প্রতিদিন এই শপথ পাঠের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সচেতন, দায়িত্বশীল এবং সেবামনস্ক নাগরিক হয়ে গড়ে উঠবে, যারা ভবিষ্যতে দুর্নীতিমুক্ত, সাম্যভিত্তিক এবং শক্তিশালী বাংলাদেশ গঠনে নেতৃত্ব দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ