
ছবি: সংগৃহীত
রাখাইন রাজ্যে চলমান সেনা ও মিলিশিয়া সংঘর্ষ এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরে মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে 'মানবিক করিডোর' নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে আজ এক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে বুধবার, ২১ মে, দুপুর ২টায় ঢাকার বেইলি রোডে অবস্থিত ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে।
সম্প্রতি রাখাইনে জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ নতুন মাত্রা পেয়েছে। এই সংঘর্ষে সীমান্তবর্তী জনপদগুলোয় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রীর তীব্র সংকটে পড়েছে লক্ষাধিক অসহায় মানুষ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ বারবার মানবিক করিডোর চালুর প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরছে, যাতে যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে জরুরি ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হয়।
এই প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে রাখাইনের ভেতরে ত্রাণ পাঠানোর জন্য একটি 'মানবিক করিডোর' বা 'মানবিক চ্যানেল' ব্যবহারের বিষয়ে প্রস্তাব বা আলোচনা চলছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এ বিষয়টিকে ঘিরে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ এটিকে নিছক মানবিক সহায়তার উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন, এর ফলে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান আজকের সংবাদ সম্মেলনে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি তুলে ধরবেন—এই উদ্যোগের প্রকৃত রূপ, এর সীমাবদ্ধতা, সম্ভাব্য ঝুঁকি, এবং এটি কিভাবে কেবলমাত্র মানবিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। তিনি গণমাধ্যমের সামনে যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেবেন।
প্রসঙ্গত, এর আগেও খলিলুর রহমান স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত 'মানবিক করিডোর' বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা বা চুক্তিতে যায়নি। গত ৪ মে বিইউপি (বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস) আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি বলেছিলেন—“আমরা কোনো চুক্তি করিনি, এমনকি কোনো সমঝোতা সই করাও হয়নি। এটি করিডোর নয়, এটি মানবিক চ্যানেল, যার সংজ্ঞা ও কাঠামো করিডোরের চেয়ে আলাদা।”
এ বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়, বাংলাদেশ সরকার ‘মানবিক করিডোর’ শব্দটি ব্যবহার করে যেন ভিন্ন বার্তা না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এ উদ্যোগটি শুধু সীমিত আকারে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর জন্য, যার সঙ্গে কোনো সামরিক, কৌশলগত বা বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নেই। আবার সরকারের তরফ থেকে এটি নিশ্চিত করার কথাও বলা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ড কোনোভাবেই তৃতীয় পক্ষের সংঘাতে ব্যবহৃত হবে না।
তবে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান অত্যন্ত সংবেদনশীল। একদিকে রাখাইন থেকে আসা রোহিঙ্গাদের চাপ, অন্যদিকে সীমান্তে সংঘর্ষ ও নতুন শরণার্থী স্রোতের আশঙ্কা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল। তাই এই ‘মানবিক করিডোর’ বা ‘চ্যানেল’ নিয়ে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
আজকের সংবাদ সম্মেলন ঘিরে therefore মিডিয়া, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং কূটনীতিকদের আগ্রহ প্রবল। বিশেষ করে এই প্রশ্নে বাংলাদেশের স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও মানবিক ভূমিকা কতটা জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়—তা আজকের বক্তব্যে স্পষ্ট হবে। একইসঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বক্তব্যের মাধ্যমে দেশবাসীও জানতে পারবে যে, বাস্তবে কী ঘটছে, এবং সরকার কী ভাবছে।
সার্বিকভাবে বলা যায়, রাখাইন অঞ্চলের সঙ্কট ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর পথ তৈরির প্রশ্নে আজকের সংবাদ সম্মেলন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বার্তা। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক মানবিক সহযোগিতার ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ