
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও সংগঠনিক ব্যবস্থা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ন ইস্যুতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ধানমন্ডি থানার আওতায় সমন্বয়ক পরিচয়ে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে আটক তিনজনকে কেন তিনি ছাড়া দিয়েছেন, সেই বিষয়টি জানাতে তাকে আগামী তিন দিনের মধ্যে লিখিত ব্যাখ্যা জমা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত বুধবার এই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান হান্নান মাসউদকে। নোটিশে বলা হয়েছে, “গতকাল মঙ্গলবার ধানমন্ডি থানার আওতাভুক্ত একটি আবাসিক এলাকায় সমন্বয়ক পরিচয়ে বিশৃঙ্খলা করার অভিযোগে তিনজন ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করে। এরপর তারা আটকের পর মুচলেকা দিয়ে জামিন পান, যেখানে আপনার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।”
নোটিশে আরো উল্লেখ রয়েছে, আটককৃত তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি, যাকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে কেন্দ্রীয় কমিটি অব্যহতি দিয়েছে। এর পরও এই তিন ব্যক্তিকে আপনি ধানমন্ডি থানায় উপস্থিত হয়ে তাদের মুচলেকা দিয়ে জামিন করিয়েছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী বলে বিবেচিত হচ্ছে। এজন্য হান্নান মাসউদের ব্যাখ্যা চাইছে এনসিপি।
তিন দিনের মধ্যে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের নিকট লিখিত বিবরণ না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত সোমবার মধ্যরাতে, যখন ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে অবস্থিত প্রকাশনা সংস্থা হাক্কানী পাবলিশার্সের মালিক গোলাম মোস্তফার বাসায় ঢোকার চেষ্টা এবং সেখানে অবস্থানরত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। তাঁরা গোলাম মোস্তফাকে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে তার বাড়ির সামনে অবস্থান করছিলেন।
ঘটনার উত্তেজনা বৃদ্ধির পর গোলাম মোস্তফা ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশকে সহায়তার জন্য আহ্বান জানান। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং তিন নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পুলিশি হেফাজতে তাদের আটকের সময়কাল প্রায় ১৩ ঘণ্টা ছিল। এরপর মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে আব্দুল হান্নান মাসউদের মাধ্যমে তাদের জামিন করিয়ে মুক্তি দেয়া হয়।
এই ঘটনাটি এনসিপির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ধরনের পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ দলের একজন সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে হান্নান মাসউদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যখন তিনি এমন তিন ব্যক্তিকে জামিন করিয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে।
দলের শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং হান্নান মাসউদকে স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের ব্যাখ্যা দিতে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে জানা যায়, শৃঙ্খলা কমিটি এই বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করে যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি বর্তমানে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। তাই দলের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা ও নেতাদের পদক্ষেপ রাজনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। এই ঘটনায় দলের একাধিক শাখা ও সমন্বয়কের মধ্যেও মতবিরোধ ও বিভাজন দেখা দিতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির জন্য শৃঙ্খলা রক্ষা ও সমন্বয় শক্তিশালী রাখা অত্যন্ত জরুরি। তাই এই ধরনের ঘটনা দলের ঐক্য ও জনপ্রিয়তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সংক্ষেপে, এনসিপি শৃঙ্খলা রক্ষায় সিনিয়র নেতাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। আব্দুল হান্নান মাসউদকে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশ দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করছে এবং একই সঙ্গে দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষার লক্ষ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে তার জবাবের ভিত্তিতে এনসিপি শৃঙ্খলা কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ