
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জাতীয় দলের তরুণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ প্রথমবারের মতো পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলার সুযোগ পেয়ে উচ্ছ্বসিত। চলতি আসরে তিনি খেলবেন লাহোর কালান্দার্সের হয়ে, যেখানে তার সতীর্থ হিসেবে থাকছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। মিরাজের মতে, এমন এক বিশ্বমানের টুর্নামেন্টে দেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের সঙ্গে আবার একসঙ্গে খেলার সুযোগ পাওয়া তার জন্য বিশেষ কিছু।
মিরাজকে লাহোর দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সিকান্দার রাজার জায়গায়। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) নিশ্চিত করে যে, ২২ মে থেকে ২৫ মে পর্যন্ত পিএসএলে অংশ নিতে তাকে অনাপত্তিপত্র (NOC) দেওয়া হয়েছে। একদিন পর, মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মিরাজ। পিএসএল খেলতে দেশের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে দেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে তার মুখে ফুটে ওঠে এক ধরনের আবেগ, উদ্দীপনা ও আত্মবিশ্বাস।
মিরাজ বলেন, “অবশ্যই ভালো লাগছে, সাকিব ভাইয়ের সঙ্গে (সর্বশেষ) খেলেছিলাম ভারতে। তারপর আর খেলা হয়নি, দেখাও হয়নি। একই দলে খেলব, খুবই ভালো লাগছে। সত্যি কথা বলতে, পিএসএলের মতো এমন একটা বড় টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছি—এটা আমার জন্য খুব বড় সুযোগ এবং সম্মানের বিষয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমি চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দিতে। আমার কাছে এটা শুধু একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ না, এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন চ্যালেঞ্জ। এখানে অনেক আন্তর্জাতিক তারকা খেলছে, তাদের সঙ্গে মাঠে নামার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য অনেক কিছু শেখার সুযোগও বটে।”
পিএসএলে এই প্রথমবার খেলার অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ পেলেও মেহেদী মিরাজ ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক লিগে খেলার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছেন। কিন্তু পিএসএলের মতো বড় মঞ্চে সুযোগ পাওয়া এবারই প্রথম। পাকিস্তানের সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে জায়গা করে নেওয়াকে তিনি দেখছেন ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হিসেবে।
এদিকে লাহোর কালান্দার্সও সামাজিক মাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে মিরাজকে দলে নেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে। মঙ্গলবার তারা টুইটারে জানায়: “মেহেদী হাসান মিরাজ এখন থেকে একজন কালান্দার! বাংলাদেশি তারকা অলরাউন্ডার আগামীকাল দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। তিনি দলে এসেছেন সিকান্দার রাজার জায়গায়। মেহেদী, তোমাকে পেয়ে আমরা দারুণ খুশি!”
উল্লেখ্য, লাহোর কালান্দার্স বর্তমানে পিএসএলের অন্যতম শক্তিশালী দল। তাদের দলে এর আগে একাধিক বিশ্বমানের খেলোয়াড় খেলেছেন, এবং গত কয়েক মৌসুমে তারা বেশ কিছু সাফল্যও অর্জন করেছে। এই দলে এবার দুই বাংলাদেশি অলরাউন্ডারের উপস্থিতি দলটিকে আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
প্রসঙ্গত, মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন। পিএসএলের এই স্বল্প মেয়াদি এনওসি পেয়ে তিনি আবারও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফিরছেন। যদিও সময়সীমা মাত্র চার দিনের, তবুও মিরাজ চান এই অল্প সময়ে নিজের যোগ্যতা ও সামর্থ্য প্রমাণ করতে।
তার কথায়, “এই সময়টুকুতে আমি নিজেকে উজাড় করে দিতে চাই। দলের পরিকল্পনায় যে ভূমিকাই দেওয়া হোক, আমি চেষ্টা করব নিজের দায়িত্ব ঠিকঠাকভাবে পালন করতে।”
মেহেদী হাসান মিরাজের মতো তরুণ খেলোয়াড়ের পিএসএল অভিষেক শুধুমাত্র তার ক্যারিয়ার নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশি বেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অভিজ্ঞতা, আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতায় ব্যাপক উন্নতি সম্ভব—এই বিশ্বাসেই তাকে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে বিসিবি সূত্রে জানা গেছে।
সাকিব-মিরাজ জুটি লাহোরের হয়ে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা এই দুই তারকাকে একসঙ্গে দেখে নিঃসন্দেহে গর্ব অনুভব করবেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ