
ছবি: সংগৃহীত
প্রায় ছয় মাস পর প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন ঘটল বাংলাদেশ দলের তারকা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের। দীর্ঘ এই বিরতির পর তার প্রত্যাবর্তনের মঞ্চ হিসেবে ছিল জমজমাট পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল)। লাহোর কালান্দার্সের হয়ে প্রথমবারের মতো মাঠে নামার সুযোগ পেয়েও প্রত্যাশা পূরণ হলো না এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাকে ফিরতে হলো ‘গোল্ডেন ডাক’ নিয়ে—প্রথম বলেই ফিরে গেছেন সাজঘরে। তবে ব্যক্তিগত ব্যর্থতা ছাপিয়ে দল লাহোর কালান্দার্স জয়ের দেখা পেয়েছে এবং জয় দিয়ে শুরু হয়েছে সাকিবের পিএসএল যাত্রা।
রোববার রাতে রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় এই ম্যাচটি। টানা বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্বে শুরু হয়। আবহাওয়াজনিত সমস্যার কারণে ২০ ওভারের ম্যাচ কমিয়ে আনা হয় ১৩ ওভারে। এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পান লাহোর কালান্দার্সের নবাগত সাকিব।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে লাহোর কালান্দার্স। ইনিংসের শুরুটা ভালোই ছিল। ওপেনার ফখর জামান ঝড়ো ব্যাটিং করে মাত্র ২৭ বলে ৬০ রান করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ৫টি চার এবং ৪টি ছক্কায়। অন্য ওপেনার মোহাম্মদ নাইম করেন ১৭ বলে ২২ রান। তবে মধ্য ও নিম্ন ক্রমের ব্যাটাররা তেমন কিছু করতে পারেননি। শেষ দিকে ইনিংসটা টানতে ব্যর্থ হয় দল। এর মধ্যেই সাত নম্বরে ব্যাট করতে নামেন সাকিব আল হাসান।
সাকিবের মাঠে নামার সময় লাহোরের রান তখন দ্রুতগতিতে বাড়ানোর প্রয়োজন ছিল। কিন্তু নিজের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে যান পেশোয়ার জালমির পেসার আহমেদ ড্যানিয়েলের বলে। বল স্টাম্পে আঘাত হানলে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারকে। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে দীর্ঘদিন পর ফিরে তার এমন ব্যর্থতা হতাশ করলেও ভক্তরা মনে করছেন, এটি শুধুই একটি ম্যাচ, পরেরবার তিনি নিশ্চয়ই নিজেকে ফিরে পাবেন।
লাহোর কালান্দার্স ৮ উইকেট হারিয়ে ১৩ ওভারে তোলে ১৪৯ রান, যা প্রতিপক্ষ পেশোয়ার জালমির সামনে লক্ষ্য দাঁড় করায় ১৫০ রানের। জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই ধুঁকতে থাকে পেশোয়ার। প্রথম সারির ব্যাটাররা একের পর এক ব্যর্থ হলে ম্যাচটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে লাহোরের।
১৩ ওভারে পেশোয়ার জালমি থামে ৮ উইকেটে ১২৩ রানে। ফলে ম্যাচে লাহোর জয় পায় ২৪ রানে। বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন লাহোরের পেসার সালমান মির্জা, যিনি ৪টি উইকেট তুলে নেন। সাকিব বল হাতে করেন ২ ওভার, খরচ করেন ১৮ রান। তবে তিনি কোনো উইকেট নিতে পারেননি।
ক্রিকেট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাকিবের মতো একজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের ওপর প্রত্যাবর্তনের ম্যাচেই প্রচণ্ড চাপ থাকে। বিসিবির নিষেধাজ্ঞা, রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ, পরিবারিক দায়িত্ব—সব মিলিয়ে ক্রিকেট থেকে দীর্ঘ বিরতির পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চাপ সামলে পারফর্ম করা সহজ নয়। তবে তারা আশাবাদী, অভিজ্ঞতা ও মানসিক দৃঢ়তায় সাকিব দ্রুতই নিজেকে ফিরে পাবেন।
ক্রিকেট বিশ্লেষক আতাহার আলী খান বলেন, “সাকিবের মতো খেলোয়াড়কে একটি ইনিংস দিয়েই বিচার করা উচিত নয়। সে মেন্টালি যতটা দৃঢ়, ততটা ফিজিক্যালিও ম্যাচ ফিট হয়ে উঠলে আবার আগের মতো পারফর্ম করবে।”
এদিকে ক্রিকেটভিত্তিক জনপ্রিয় বিশ্লেষণমূলক ওয়েবসাইট Crictracker এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে, “সাকিবের গোল্ডেন ডাক তার মতো খেলোয়াড়ের জন্য বড় ধাক্কা হলেও তার সামর্থ্য এবং অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের ম্যাচগুলোতে কাজে লাগবে।”
সাকিবের দল লাহোর কালান্দার্স এখন পর্যন্ত এবারের পিএসএলে ধারাবাহিক নন, তবে এই জয়ের মাধ্যমে তারা আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। আগামী ম্যাচগুলোতে সাকিবের ব্যাট ও বল হাতে প্রভাব রাখার সুযোগ আছে এবং দলও চাইবে অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার পূর্ণ গতিতে ফিরুন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ