
ছবি: সংগৃহীত
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের ক্রিকেটে তরুণদের উত্থান নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন উদীয়মান ব্যাটার পারভেজ হোসেন ইমন। তার বিধ্বংসী ইনিংসের পর শেষের দিকে পেসারদের কার্যকর বোলিংয়ে ভর করে বাংলাদেশ জয় তুলে নিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে টাইগাররা ২৭ রানের ব্যবধানে জয়ী হয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল।
ম্যাচের শুরুতেই টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। ইনিংসের গোড়ায় কিছুটা ধীরগতির থাকলেও একপ্রান্ত আগলে রেখে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মারমুখো ব্যাটিংয়ে নজর কাড়েন ইমন। ৫৪ বলে ১০০ রানের ঝকঝকে ইনিংস খেলে তিনি শুধু দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেননি, বরং গড়েছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। ৫৩ বলেই তিন অঙ্কের ঘরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। এই ইনিংসে ছিল ৯টি ছক্কা ও ৫টি চার, যা তাঁর ব্যাটিংয়ের আগ্রাসী রূপের প্রমাণ।
ইমনের ব্যাটিংয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে পুরো দল আক্রমণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলে। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৯১ রান। এই ইনিংসে দলীয় ছক্কার সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩, যা বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৮ সালের নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১২ ছক্কা ছিল পূর্ববর্তী রেকর্ড।
তবে বাংলাদেশের পক্ষে কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। ব্যাটিং পর্বের পর জয় যেন নিশ্চিত বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু সংযুক্ত আরব আমিরাতের ব্যাটাররা লড়াইটা কঠিন করে তোলে। বিশেষ করে ওপেনার ও অধিনায়ক মোহাম্মদ ওয়াসিম শুরু থেকেই দেখেশুনে খেলেন। ৩৯ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে ছিল ৩টি ছক্কা ও ৪টি চার। তার সঙ্গে ৬২ রানের জুটি গড়ে রাহুল চোপড়া (২২ বলে ৩৫ রান) বাংলাদেশের পেস আক্রমণকে চাপে ফেলে দেয়। দুই ওপেনার রান রেট মেপে মেপেই তুলছিলেন।
কিন্তু ঠিক তখনই ম্যাচে মোড় নেয়। ১২তম ওভারে তানজিম হাসান সাকিব শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ তুলিয়ে ওয়াসিমকে ফিরিয়ে এনে দেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেকথ্রু। এরপর ১৪তম ওভারে আবারও সাকিব প্রভাব বিস্তার করেন রাহুল চোপড়াকে আউট করে। তাদের জুটি ভাঙার পর আর কেউ স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। একের পর এক উইকেট পতনে আমিরাতের ইনিংস ছন্দ হারিয়ে ফেলে।
যদিও এরপর কিছুটা উত্তেজনা ছড়ান মিডল অর্ডার ব্যাটার আসিফ খান। মাহেদী হাসানের এক ওভারে টানা তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে হঠাৎ ম্যাচে উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দেন। ২১ বলে ৪২ রানের ঝড়ো ইনিংসে ছিল ৪টি ছক্কা ও ৩টি চার। কিন্তু তাঁর এই লড়াই শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি। হাসান মাহমুদের এক সুশৃঙ্খল ডেলিভারিতে ধরা পড়ে যান তিনি।
বাংলাদেশের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন পেসাররাই। হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে শিকার করেন ৩ উইকেট। মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন অনবদ্য। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে তুলে নেন ২টি উইকেট। বিশেষ করে ইনিংসের ১৮ ও ২০তম ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন কাটার মাস্টার। তানজিম হাসান সাকিবও বল হাতে বেশ কার্যকর ছিলেন—৩৭ রান দিয়ে পান ২ উইকেট। তাদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কারণেই শেষপর্যন্ত আর বড় বিপদে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে।
এই ম্যাচে পারফরম্যান্সের জন্য পারভেজ হোসেন ইমন ম্যাচসেরা নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের তরুণ এই ব্যাটারের এমন ঝলমলে ইনিংস কেবল ম্যাচ জেতায়ই ভূমিকা রাখেনি, বরং ভবিষ্যতের জন্য তার সম্ভাবনার দরজাটাও অনেক বড় করে খুলে দিয়েছে। নির্বাচকরা যেমন বিকল্প খুঁজছেন, ইমন তেমনই একজন যাকে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় ভাবা যেতে পারে।
এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। পরবর্তী ম্যাচে জিততে পারলে সিরিজ নিজেদের করে নিতে পারবে টাইগাররা। তবে আজকের ম্যাচ দেখেই পরিষ্কার—জিততে হলে শুধু ব্যাটিং নয়, প্রয়োজন ধারাবাহিকভাবে কার্যকর বোলিংও। ইমনের সেঞ্চুরি যেমন ম্যাচের চিত্রপট তৈরি করেছিল, তেমনি পেসারদের দৃঢ়তায়ই জয় নিশ্চিত হয়েছে। এটাই ছিল বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ