
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচী নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, তবে ২০২৬ সালের জুন মাসের পর নির্বাচন আয়োজন করা হবে না বলে নিশ্চিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে তিনি স্পষ্ট করেননি যে, নিজে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না। এ সংক্রান্ত তথ্য জানা যায় বৃহস্পতিবার (১৫ মে) প্রকাশিত একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে, যা দি ইকোনমিস্টে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বিবৃতিতে বলেন, গত কিছু সময়ের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক থেকে সাফল্য অর্জন করেছে। বিশেষ করে দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে সরকারের প্রভাবকে ইতিবাচক হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি জানান, এই অর্জনগুলো দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সাময়িকভাবে কিছুটা শক্তিশালী করেছে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এখনও অত্যন্ত দুর্বল এবং কাঙ্ক্ষিত গতি অর্জন করতে পারেনি। পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এখনো ভঙ্গুর এবং অস্থিরতার ছায়া কাটিয়ে ওঠা কঠিন হচ্ছে। দেশে গত ৯ মাস আগে যেসব বিপ্লবী পরিবর্তন শুরু হয়েছিল, সেগুলো সম্পূর্ণ রূপে ফলপ্রসূভাবে বাস্তবায়ন করা কঠিন প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিপ্লবের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বড় ধরনের স্থায়ী পরিবর্তন আনা এখনো চ্যালেঞ্জিং।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তুলতে একটি ‘ঐকমত্য কমিশন’ গঠন করা হবে। এই কমিশন ‘জুলাই সনদ’ নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রণয়ন করবে, যা আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পথ সুগম করবে এবং ‘নতুন বাংলাদেশ’ গঠনে সহায়তা করবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ঐকমত্যে পৌঁছানো সহজ হবে না, কারণ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে কমিশন গঠনের ধরন ও কার্যকারিতা নিয়ে নানা মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে ঐকমত্যের যাত্রা শুরুতেই বিভিন্ন কমিশন সংক্রান্ত মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, দেশের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি তৈরি পোশাক খাতের জন্য একটি স্বতন্ত্র কমিশন থাকা উচিত। অন্যদিকে কেউ বলেছেন, শিক্ষাখাতকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। তদুপরি সবচেয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে নারী সংস্কার কমিশনকে কেন্দ্র করে।
নারী সংস্কার কমিশন গঠন নিয়ে বিশেষ বিতর্ক হয়েছে কারণ এটি অনেক দেরিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এই কমিশন ইসলামী উত্তরাধিকার আইনে নারীদের অধিকারের ব্যাপক সম্প্রসারণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইসলামপন্থী দলগুলো থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে আওয়ামী লীগ দলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ১২ মে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করেছে, যার ফলে দলটি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারিয়েছে। এই ঘটনা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনের পরিবেশকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
এই প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দেশের নির্বাচনের পরিবেশ যত দ্রুতই শুদ্ধ হোক, তা হলে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে। তবে সেই পথটা এখনো অনেক বাধা-বিপত্তিতে ঘেরা।’ তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, দলীয় মতপার্থক্য ভুলে গিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির এই জটিলতায় দেশের সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা আগামি সময়ের নির্বাচনকে এক কঠিন পরীক্ষা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনের সময়সূচী ও নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে এই অন্তর্বর্তী সরকারের সক্ষমতা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত সহযোগিতার উপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ