
ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও উপস্থাপিকা নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তারকে ঘিরে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাকে ‘বিব্রতকর’ আখ্যা দিয়ে এর নিন্দা জানিয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, “নুসরাত ফারিয়ার গ্রেপ্তার আমাদের জন্য বিব্রতকর একটি ঘটনা হয়ে থাকলো।” এই মন্তব্য তিনি করেছেন সোমবার সকালে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে।
ফারুকী স্পষ্ট করে জানান, যদিও তিনি সচরাচর নিজ মন্ত্রণালয়ের বাইরের বিষয়ে কথা বলেন না, তবে এই ইস্যুতে নীরব থাকা সম্ভব নয় কারণ, “আমি এই ইন্ডাস্ট্রিরই মানুষ ছিলাম এবং দুইদিন পর সেখানেই ফিরে যাবো।” তার মতে, একজন শিল্পীর বিরুদ্ধে এই ধরনের গ্রেপ্তার ‘খুবই স্পর্শকাতর ও সাবধানতার সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত’ ছিল।
তিনি বলেন, “সরকারের কাজ হচ্ছে জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা। ঢালাওভাবে দায় চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা আছে, তার বিপরীতে আমরা শুরু থেকেই বলেছি— কারও সংশ্লিষ্টতা না থাকলে, প্রাথমিক তদন্ত ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না। এবং সেই নীতিই অনুসরণ করা হচ্ছিল।”
তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই গ্রেপ্তার!
স্ট্যাটাসে উপদেষ্টা জানান, ফারিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি বহুদিন ধরেই ছিল। তবে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তারের কোনও সরকারি উদ্যোগের কথা তার জানা ছিল না। তার ভাষ্য, “কিন্তু এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই এই ঘটনা ঘটে গেল। সম্ভবত আওয়ামী লীগের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বিদেশ গমনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া জনমনে ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনে এক ধরনের ‘ওভার নার্ভাসনেস’ তৈরি হয়েছে। এবং সেখান থেকেই হয়তো এ ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটে গেছে।”
ফারুকী জানান, এই প্রথম নয়, এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “ক’দিন আগে ব্যারিস্টার আন্দালিব পার্থের স্ত্রীর সঙ্গেও এমনই এক বিব্রতকর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার কোনওটাই সমর্থনযোগ্য নয়।”
আইনি প্রতিকারের আশা ফারুকীর
নুসরাত ফারিয়ার আইনি প্রতিকারের ওপর আস্থা প্রকাশ করে ফারুকী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি ফারিয়া আইনি প্রতিকার পাবে। পাশাপাশি আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঢালাও মামলাগুলো আরও সংবেদনশীলভাবে হ্যান্ডেল করা হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে— জুলাইয়ের প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের আওতায় আনা, নিরীহদের হেনস্তা করা নয়।”
কী ঘটেছিল বিমানবন্দরে?
গতকাল রোববার সকালে বাংলাদেশি অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়াকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তিনি তখন থাইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছিলেন। ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে যাচাই-বাছাইয়ের সময় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় তাকে আটক করা হয়।
পরে তাকে ভাটারা থানায় আনা হলেও থানায় না রেখে সরাসরি গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত গণ-অভ্যুত্থান-সদৃশ এক বিক্ষোভে সহিংসতায় অংশগ্রহণ এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ফারিয়ার নাম আসামির তালিকায় ছিল।
নুসরাত ফারিয়া কে?
২০১৫ সালে বাংলাদেশের সিনেমা ‘আশিকি’ দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক হয় নুসরাত ফারিয়ার। এরপর তিনি ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত বেশ কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। একাধারে তিনি মডেল, টিভি উপস্থাপিকা ও গায়িকা হিসেবেও কাজ করছেন। তার পেশাগত জীবন ও ব্যক্তিজীবন সবসময়ই মিডিয়ার আলোচনায় থেকেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
এই গ্রেপ্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে— আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে? একজন উচ্চপ্রোফাইল শিল্পীকে যেভাবে বিমানবন্দরে জনসমক্ষে গ্রেপ্তার করা হলো, তা কি কোনো ধরনের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা? নাকি এটি শুধুই প্রশাসনিক ভুল? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় যেসব শিল্পী, সাংবাদিক ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছেন, তাদের অনেকে এই ‘ঢালাও গ্রেপ্তার নীতির’ শিকার হচ্ছেন। নুসরাত ফারিয়ার ঘটনা সেই দীর্ঘ তালিকারই এক নতুন সংযোজন।
এই ঘটনাটি আগামী কয়েক দিনে সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সরকারের জবাবদিহি ও নীতি নির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ