
ছবি: সংগৃহীত
ইয়ামালের জাদুতে লা লিগার ২০২৪–২৫ মৌসুমের সেরা নাটকের মঞ্চ প্রস্তুত ছিল এস্পানিয়লের মাঠে। আর সেই মঞ্চে প্রধান চরিত্র হয়ে আবির্ভূত হলেন কিশোর প্রতিভা লামিন ইয়ামাল। গোটা মৌসুম জুড়েই তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তার পারফরম্যান্সে ভর করেই একে একে একাধিক ট্রফি জিতে নেয় বার্সেলোনা। আর শিরোপা নির্ধারণী রাতেও যেন জাদু ছড়াতে ভুললেন না এই ‘কিশোর জাদুকর’।
শুধু গোল নয়, খেলায় নিয়ন্ত্রণ, প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেঙে দেওয়া পাস, মুগ্ধতা জাগানো ড্রিবল—সব মিলিয়ে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে বার্সাকে এনে দিলেন ২-০ গোলের দারুণ এক জয়। আর সেই জয়ের সঙ্গেই নিশ্চিত হলো কাতালান ক্লাবটির ২৮তম লা লিগা শিরোপা।
লামিন ইয়ামাল শুরু থেকেই ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এমন ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, যা দেখে চমকে গেছে ফুটবলবিশ্ব। আর তার নৈপুণ্যের প্রতিফলন পড়েছে বার্সার প্রতিটি বড় ম্যাচে।
লা লিগার শেষ ভাগে এসে যেখানে প্রতিযোগিতা হাড্ডাহাড্ডি, সেখানেই ফ্লিকের তরুণ ব্রিগেড প্রতিপক্ষকে বারবার হারিয়ে দিয়েছেন। বিশেষ করে এই ডার্বি ম্যাচে ইয়ামালের প্রথম গোল এবং অতিরিক্ত সময়ে তার পাস থেকে ফেরমিন লোপেজের গোল বার্সাকে পৌঁছে দেয় কাঙ্ক্ষিত সোনার মুকুটে।
৫৩তম মিনিটে ডান দিক থেকে কাটা এনে ইয়ামাল বাম পায়ের বাঁকানো শটে যে গোলটি করেন, তা যেন স্পেনের হয়ে ইউরো সেমিফাইনালে করা তার গোলেরই পুনরাবৃত্তি। আর ৯৫ মিনিটে তার দৃষ্টিনন্দন পাস থেকেই গোল করেন লোপেজ, নিশ্চিত হয়ে যায় ম্যাচ এবং শিরোপা দুই-ই।
এই মৌসুম বার্সেলোনার জন্য ছিল সোনালী সাফল্যের। জানুয়ারিতে সৌদি আরবের মাটিতে তারা জেতে স্প্যানিশ সুপার কাপ। মে মাসের শুরুতে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে কোপা দেল রে’র শিরোপাও আসে বার্সার ঘরে।
এবার লা লিগা জয় মানেই ঘরোয়া ট্রেবল সম্পন্ন। শুধুমাত্র ইউরোপিয়ান সাফল্য—অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপাটা অধরাই রয়ে গেল। তবে তরুণ এই দলটি ভবিষ্যতের জন্য বার্সেলোনার যে শক্ত ভিত তৈরি করে দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।
এই জয়ের ফলে বার্সার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮৬ পয়েন্ট, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের থেকে ৭ পয়েন্ট বেশি। হাতে মাত্র দুটি ম্যাচ, ফলে বার্সাকে আর কেউ ধরার সুযোগ রাখে না।
বার্সার কোচ হ্যানসি ফ্লিক তার দায়িত্বের প্রথম মৌসুমেই দলকে পুনর্গঠিত করে, অভিজ্ঞতার সঙ্গে তরুণ শক্তির সমন্বয়ে এমন এক দল তৈরি করেছেন যারা বড় ম্যাচে সাহসী এবং চাপের মুখে ঠান্ডা মাথার।
২০২৩ সালের এই একই মাঠে লিগ শিরোপা নিশ্চিত করার পর উত্তেজিত এস্পানিয়ল সমর্থকেরা বার্সার খেলোয়াড়দের দিকে তেড়ে এসেছিল। এবার অবশ্য দৃশ্যপট খানিক ভিন্ন। ম্যাচ শেষের কিছু সময়ের জন্য দর্শকদের ক্ষোভ ফুটে উঠলেও বড় ধরনের কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। মাঠে পানির বোতল ছোঁড়া হলেও বার্সার খেলোয়াড়রা দ্রুত টানেলের দিকে চলে যান এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
ইয়ামালের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ শুধু বার্সা সমর্থকরাই নন, তার প্রশংসা করেছেন খোদ লিওনেল মেসিও। এক সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, "ইয়ামাল এখনই বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন। বয়স শুধুমাত্র সংখ্যা, মাঠের পারফরম্যান্সই সব বলে দেয়।"
এই মৌসুমে লিগে তার গোল সংখ্যা ৮। এর মধ্যে রিয়াল মাদ্রিদ ও আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল, এবং শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে গোল করে তিনি প্রমাণ করলেন—বড় মঞ্চে খেলার জন্য তিনিই যোগ্যতম।
ম্যাচের শেষদিকে এস্পানিয়ল আরও চাপে পড়ে যখন লিয়ান্দ্রো কাবরেরা ইয়ামালকে কনুই মেরে লাল কার্ড দেখেন। এরপরও তারা এক খেলোয়াড় কম নিয়ে আক্রমণে ঝাঁপিয়েছিল, কিন্তু লোপেজের দ্বিতীয় গোলেই শেষ হয়ে যায় সব প্রতিরোধের গল্প।
এই জয়ে বার্সা গত ছয় বছরে দ্বিতীয়বার লিগ শিরোপা জিতল। তবে এবারটি একটু আলাদা। কারণ, দলের বড় অংশ জুড়ে তরুণরা, যাদের নেতৃত্বে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।
আর তারই মুখচ্ছবি যেন লামিন ইয়ামাল। গোল, অ্যাসিস্ট, পরিণত খেলোয়াড়সুলভ আচরণ—সবকিছু মিলিয়ে তিনি এখন বার্সেলোনার শুধু নায়কই নন, ভবিষ্যতের স্তম্ভও।
যে রাতে বার্সেলোনা তাদের ইতিহাসে আরেকটি লিগ শিরোপা যোগ করল, সেই রাতে ইয়ামালও নিজের নামটা লিখে নিলো বার্সা কিংবদন্তিদের পাশে।ডার্বি জিতে লা লিগার মুকুটে আবারও বার্সেলোনা
বাংলাবার্তা/এমএইচ