
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ একটি ফ্লাইটে কক্সবাজার থেকে আগত এক যাত্রীর কাছ থেকে ২,৮২০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)। এই ঘটনায় হোছন আহমদ (৬০) নামে এক মাদক পরিবহনকারীকে আটক করা হয়েছে। পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি পেটের ভেতরে ইয়াবা বহনের অভিনব ও ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতি অবলম্বন করে ঢাকায় প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের BS-152 নম্বর ফ্লাইটে করে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছানোর পর সন্দেহভাজন যাত্রী হোছন আহমদকে আজ শুক্রবার (১৬ মে) রাজধানীর বিমানবন্দর থানাধীন বলাকা ভবনের উত্তর পার্শ্ব এলাকা থেকে আটক করে এপিবিএনের সদস্যরা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আটকের পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আর্মড পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন যে, পাকস্থলীর ভেতরে কৌশলে ইয়াবা বহন করছেন। এরপর দ্রুত তাকে বিমানবন্দরে কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয় এবং এক্স-রে পরীক্ষার মাধ্যমে তার পেটে ডিম্বাকৃতির প্রায় ৩০টি বস্তু শনাক্ত হয়।
পরবর্তীতে তাকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে তার পায়ুপথ দিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ৩০টি পোটলা বের করা হয়, যা ছিল বিশেষ কসটেপে মোড়ানো। প্রত্যেকটি পোটলা খুলে গণনা করলে মোট ২,৮২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া যায়। এসব ট্যাবলেটগুলো কক্সবাজার অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আটক হোছন আহমদের বয়স ৬০ হলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাদক পরিবহন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে এপিবিএন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, তিনি অতীতেও একাধিকবার সন্দেহভাজন হিসেবে নজরদারিতে ছিলেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে পূর্বে দায়ের করা কয়েকটি মামলারও তথ্য পাওয়া গেছে।
তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর ৩৬(১) এর ১০(খ) ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে বিমানবন্দর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনিতা রানী সূত্রধর জানান, “সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, মাদক পাচারকারীরা আগের তুলনায় অনেক বেশি বিমানবন্দর ব্যবহার করছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে যাত্রী বেশে মাদক পরিবহনের প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যাত্রীদের গতিবিধির উপর কড়া নজরদারি করছি। কেবল হোছন আহমদই নয়, গত কয়েক সপ্তাহে আমাদের একাধিক অভিযানে মোট পাঁচজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে, যাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১৬,০০০-এরও বেশি ইয়াবা ট্যাবলেট।”
এপিবিএনের কর্মকর্তারা জানান, তারা এখন আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করছেন। পাশাপাশি গোপন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য মাদক পরিবহনকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। ঢাকাগামী এবং কক্সবাজারসহ সীমান্তবর্তী জেলা থেকে আগত যাত্রীদের ওপর বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে।
একজন প্রবীণ ব্যক্তির পেটের মধ্যে কসটেপে মোড়ানো ইয়াবা বহনের মতো ভয়াবহ পদ্ধতি বাংলাদেশের মাদক পরিস্থিতির একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে থাকলেও মাদক চক্রের কৌশল দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। এই ঘটনা ফের প্রমাণ করলো যে বিমানবন্দর কেবল আন্তর্জাতিক নয়, অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটেও মাদক পাচারের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই কঠোর নজরদারি, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করা জরুরি।
বাংলাবার্তা/এসজে