
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাজারে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারের স্বাভাবিকতা বজায় রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দৃঢ় মনোভাব নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তায় জানান, যদি ডলারের বিনিময় মূল্যে অস্বাভাবিকভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে এবং কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছামত দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ও দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। তিনি আরও বলেন, “ডলারের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন অতিরিক্ত মুনাফা না করতে পারে সেজন্য আমরা আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি এবং তদারকি কার্যক্রম বাড়িয়েছি।”
ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর বলেন, “যদি বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে যে ডলারের বিনিময়মূল্য কাঙ্ক্ষিত সীমার তুলনায় বেশি অবমূল্যায়িত হয়েছে, তাহলে আমরা অবশ্যই বাজারে হস্তক্ষেপ করব। আমাদের কাছে এমন সব হাতিয়ার রয়েছে যা দিয়ে আমরা বাজারের স্বাভাবিকতা রক্ষা করতে পারি।” এই মন্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিবিড় নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কঠোর অবস্থানের পেছনে মূল কারণ হলো সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম বাজারে অস্থিরতা এবং কিছু ব্যাংকের দ্বারা মূল্য বেশি বাড়ানোর প্রবণতা। তবে ব্যাংকের নিবিড় তদারকি এবং রেফারেন্স রেট ঘোষণা করার পর থেকে বাজারে দাম বেশ কয়েকদিন ধরে স্থিতিশীল রয়েছে।
ডলারের বাজার মূল্যে সাম্প্রতিক দুই দিন ধরে বড় ধরনের ওঠানামা দেখা যায়নি। বেশিরভাগ ব্যাংক ডলার ১২২ টাকার মধ্যে বিক্রি-বাণিজ্য করছে, এবং কিছু ব্যাংক রেমিট্যান্স ১২২ টাকায় কিনে তা ১২৩ টাকায় বিক্রি করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন রেফারেন্স রেট প্রকাশ করছে, যা বাজারে মূল্য বৃদ্ধির হাত থেকে প্রতিরোধ করছে। বৃহস্পতিবার রেফারেন্স রেট ছিল ১২১ টাকা ৯৯ পয়সা, যা বাজারে স্থিতিশীলতা প্রদর্শন করছে।
একই অনুষ্ঠানে, যেখানে এই বিষয়গুলি আলোচনা হয়েছিল, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত সংস্কার প্রয়োজন হয় না। জাপানের অর্থনীতি মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়িয়েছে। এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো আমাদেরও সঠিক নীতি গ্রহণ করে কার্যকর সমন্বয় করে এগিয়ে যেতে হবে।” তার কথায় উঠে আসে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে নীতিমালা বাস্তবায়নের গুরুত্ব এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা।
এছাড়া, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এর উদ্যোগে ‘সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে মাসিক বিশ্লেষণ’ (এমএমআই) অনুষ্ঠানে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক খুরশীদ আলম, মুখ্য অর্থনীতিবিদ আশিকুর রহমান ও অর্থনীতিবিদ জাইদি সাত্তার মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ ধরনের বিশ্লেষণ ও গবেষণা অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ওপর তদারকি বৃদ্ধি করেছে এবং ভবিষ্যতে যেকোনো অনিয়ম বা কারসাজি হলে তা দ্রুত শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। ডেপুটি গভর্নর হাবিবুর রহমান স্পষ্ট করেছেন, “আমরা চাই না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অযথা মূল্য বৃদ্ধি করে সাধারণ মানুষের ওপর আর্থিক বোঝা বাড়াক।”
বিগত সময়ে অর্থনীতিতে অস্থিরতা বা বাজারে জোরপূর্বক মূল্যবৃদ্ধি দেশব্যাপী নানা সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির জন্য নীতি নির্ধারক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় ও সুসম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য নিয়মিত নোটিশ, রেফারেন্স রেট প্রকাশ ও ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম তদারকি চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে দাম বাড়ানোর কোনো অপচেষ্টা বা কারসাজি হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনি ও প্রশাসনিক কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে।
বর্তমানে ডলারের বিনিময়মূল্যে যেকোনো ধরনের অস্থিরতা রোধ করা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতা এবং কঠোর নজরদারি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণ ও অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ