
ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশে ফের শুরু হয়েছে বৃষ্টির ধারা, আর এর পেছনে রয়েছে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ। এই বৃষ্টিপাত শুধু একদিনের জন্য নয়—আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত টানা ৫ দিন ধরে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এর মধ্যে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অত্যন্ত ভারি বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের শুক্রবার (১৬ মে) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার (পাঁচ দিন) পূর্বাভাসে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া লঘুচাপ ও মৌসুমি প্রভাবে সপ্তাহজুড়ে একাধিক স্থানে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত ঘটতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস
পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে একটি পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ। এর ফলে আজ শুক্রবার দেশের রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুই-একটি জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি বা বৃষ্টি হতে পারে।
রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি এলাকায় মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস। তবে সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা বর্তমানে প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রা: অঞ্চলভিত্তিক পূর্বাভাস
শনিবার ও রবিবার (১৭-১৮ মে):
এই দুই দিন রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে। বাকি বিভাগের দু-এক জায়গায় দমকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
শনিবার: দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
রবিবার: দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমবে, রাতের তাপমাত্রা প্রায় একই থাকবে।
সোমবার ও মঙ্গলবার (১৯-২০ মে):
সপ্তাহের শুরুতেও বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকবে।
রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে দুই-এক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সোমবার: দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পাবে।
মঙ্গলবার: দিনের ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে।
বৃষ্টিপাত হ্রাসের আভাস
আবহাওয়ার বর্ধিত পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এই সময়ের শেষভাগে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কিছুটা হ্রাস পেতে পারে।
গতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত
গত ২৪ ঘণ্টায় (বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোর ও সাতক্ষীরায়—৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই সময় যশোরে ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা থেকে বোঝা যায়—তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের বিরল সমাবেশ ঘটেছে।
মৃদু তাপপ্রবাহ: কোথায় কতটা
বর্তমানে নোয়াখালী, ফেনী, পটুয়াখালী, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর ও বান্দরবান জেলার পাশাপাশি খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, এই তাপপ্রবাহ কিছু কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে।
জনসাধারণের জন্য পরামর্শ
দেশব্যাপী টানা বৃষ্টিপাতের ফলে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঝুঁকি এবং বজ্রপাতজনিত দুর্ঘটনা বাড়তে পারে। তাই:
খোলা জায়গায় অবস্থান পরিহার করুন
গাছ বা বিদ্যুতের খুঁটির নিচে আশ্রয় নেবেন না
প্রবল বৃষ্টির সময় অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ এড়িয়ে চলুন
দেশজুড়ে টানা বৃষ্টিপাতের যে চক্র শুরু হয়েছে, তা আগামী পাঁচ দিন স্থায়ী হতে পারে। এতে একদিকে যেমন স্বস্তি ফিরতে পারে খরায় জর্জর কৃষিতে, অন্যদিকে ভারি বর্ষণের ফলে বাড়তে পারে দুর্যোগের শঙ্কা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত আপডেটের দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই সময়ে যারা বাইরে যাতায়াত করছেন, বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে, তাদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ