
ছবি: সংগৃহীত
যুগ যতই এগিয়ে চলুক, বিজ্ঞান যতই উন্নত হোক না কেন—মানুষের কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাস যেন ঠিক ততটাই দৃঢ়ভাবে সমাজে গেঁথে আছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই কুসংস্কারের ছায়া এসে পড়েছে বলিউডের মতো আধুনিক ও ঝলমলে দুনিয়ার গায়েও। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা তারকাদের নিয়েও মাঝে মাঝেই শোনা গেছে অদ্ভুত সব গুজব, যেগুলোর মূলে ছিল কালো জাদু বা তন্ত্রসাধনার অভিযোগ।
ভারতীয় বিনোদনজগতে মাঝে মাঝেই এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে, যা শুধু মিডিয়া নয়, নেটিজেনদের মাঝেও তৈরি করে তীব্র কৌতূহল ও তর্ক-বিতর্ক। বলিউডের পাঁচজন জনপ্রিয় অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে সময় সময় উঠেছে এমনই অভিযোগ—কেউ প্রাক্তন প্রেমিককে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে, কেউ ক্যারিয়ার বাড়াতে, কেউ বা সম্পর্কে ভাঙনের পর আবার তা জোড়া লাগাতে নাকি আশ্রয় নিয়েছেন 'কালো জাদু'-র মতো প্রাচীন ও বিতর্কিত পদ্ধতির।
কঙ্গনা রানাউত: ঠোঁটকাটা কুইনের বিরুদ্ধে প্রেমিকের অভিযোগ
বলিউডে কঙ্গনা রানাউত বরাবরই নিজের ঠোঁটকাটা বক্তব্য ও সাহসী অবস্থানের জন্য পরিচিত। কিন্তু তার ব্যক্তিগত জীবনেও বিতর্কের শেষ নেই। এক সময়কার প্রেমিক অধ্যয়ন সুমন সরাসরি অভিযোগ করেছিলেন যে কঙ্গনা তার ওপর কালো জাদু প্রয়োগ করেছিলেন। তার দাবি অনুযায়ী, কঙ্গনা শুধু তন্ত্রসাধনার চর্চা করতেন না, বরং সম্পর্কের সময় তাকে নাকি মানসিকভাবে প্রভাবিত করে নিজের ইচ্ছামতো চালনা করার চেষ্টা করতেন।
কঙ্গনা যদিও এসব অভিযোগকে ‘অপ্রাসঙ্গিক এবং হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি তিনি মজা করে বলেন, ডাইনি বিদ্যা বহু পুরনো প্রথা, এবং সমাজের চোখে নারীর স্বাধীন চিন্তাভাবনাকেই প্রায়শই ‘ডাইনি’ বলে ট্যাগ দেওয়া হয়।
কিয়ারা আদভানি: 'প্রেমে পড়া মানেই কি কালো জাদু?'
বলিউডের নতুন প্রজন্মের অন্যতম জনপ্রিয় মুখ কিয়ারা আদভানি তার ব্যক্তিত্ব ও অভিনয়ের জন্য বেশ প্রশংসিত। তবে সিদ্ধার্থ মালহোত্রার সঙ্গে বিয়ের পর কিছু নেটিজেন তাকে নিশানা করে দাবি করেন, কিয়ারা নাকি সিদ্ধার্থকে 'বশীভূত' করেছেন। এমনকি তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টও নাকি তিনি নিজে পরিচালনা করতে পারছেন না—এমন উদ্ভট অভিযোগও শোনা যায়।
তবে এই দম্পতি কখনোই এসব গুজবের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। তারা বরং নিজেদের সম্পর্ককে যথেষ্ট ব্যক্তিগত এবং সম্মানের সঙ্গেই উপস্থাপন করে এসেছেন।
রিয়া চক্রবর্তী: সুশান্তের মৃত্যুর পর বিতর্কের কেন্দ্রে
বলিউড ইতিহাসের অন্যতম দুঃখজনক অধ্যায় ছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের আকস্মিক মৃত্যু। এরপর তার প্রাক্তন প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ওঠে একের পর এক অভিযোগ—মাদক মামলায় জড়িয়ে পড়া, মানসিক নির্যাতন এবং এমনকি কালো জাদুর মতো অভিযোগও। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই দাবি করেন, রিয়া নাকি তন্ত্রসাধনার মাধ্যমে সুশান্তকে ‘প্রভাবিত’ করেছিলেন।
পরে এক সাক্ষাৎকারে রিয়া বলেন, অনেকে তাকে ‘ডাইনি’ বলে ট্রোল করে। তবে তিনি হেসে বলেন, ঘরে ঢুকলেই বুঝতে পারেন, কে তাকে ভয় পায় আর কে সাহসী। এমন মন্তব্য করে তিনি একরকম ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতেই অভিযোগগুলো উড়িয়ে দেন।
পায়েল রোহতগি: নিজেই করিয়েছিলেন বশীকরণ পূজা
এই তালিকার একমাত্র অভিনেত্রী যিনি স্বীকার করেছেন যে তিনি তন্ত্রসাধনার চেষ্টা করেছিলেন, তিনি হলেন পায়েল রোহতগি। ২০২২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, অভিনয় জীবনে উন্নতির আশায় তিনি একাধিক ‘বশীকরণ পূজা’ করিয়েছিলেন। তবে তার কথায়, “অন্তত আমার জীবনে তার কোনো ইতিবাচক ফল আসেনি।” তার এই স্বীকারোক্তি শোরগোল ফেলে দিয়েছিল বিনোদন অঙ্গনে।
দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠী: ভাঙা প্রেম জোড়া লাগাতে তান্ত্রিক পথ?
টেলিভিশনের জনপ্রিয় মুখ দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠীর প্রেমের সম্পর্ক ভেঙেছিল অভিনেতা শরদ মলহোত্রের সঙ্গে। এই সম্পর্কের পরদিন থেকেই দিব্যাঙ্কার মানসিক অবস্থা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। কেউ কেউ বলেন, তিনি নাকি সম্পর্ক আবার ফিরিয়ে আনার জন্য তান্ত্রিক উপায়ে চেষ্টা করেছিলেন।
যদিও এ নিয়ে দিব্যাঙ্কা কখনো খোলাখুলি কিছু বলেননি, তবে মিডিয়া মহলে এই গুজব বেশ কিছুদিন ধরে ছিল আলোচনার কেন্দ্রে।
কালো জাদুর অভিযোগ: বাস্তব না গুজব?
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই পাঁচ অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা কালো জাদুর অভিযোগের কোনোটিই আজ পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণে রূপ নেয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এগুলো রটনা কিংবা অসন্তুষ্ট প্রাক্তন বা অনুরাগীদের তৈরি করা গুজব বলেই প্রমাণিত হয়েছে।
তবুও তারকাদের ঘিরে এমন বিতর্ক বরাবরই দর্শকদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি করে। ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনা, সম্পর্কের ওঠানামা, ক্যারিয়ারের টানাপোড়েন—সবকিছু মিলিয়ে তারা হয়ে ওঠেন চর্চার কেন্দ্রে। আর যখন সেই চর্চায় ঢুকে পড়ে ‘কালো জাদু’-র মতো রহস্যময় ও বিতর্কিত উপাদান, তখন তো তা নিয়ে আলোচনা আরও বেড়ে যায়।
বলিউড তারকাদের বিরুদ্ধে কালো জাদুর অভিযোগ নতুন কিছু নয়। তবে বাস্তবতা হলো, এই গ্ল্যামার জগতের বাইরেও তারকারা মানুষ, যাদের জীবনেও থাকে ভালো-মন্দের মিশেল। সমাজে বিদ্যমান কুসংস্কারের কারণে, বিশেষত নারীদের বিরুদ্ধেই এমন অভিযোগ বারবার উঠে এসেছে—কখনো তাদের সাফল্যকে হিংসায় ব্যাখ্যা করে, কখনো ভাঙা সম্পর্কের ব্যর্থতা ঢাকতে।
এ কারণেই বলিউড হোক বা বাস্তব জীবন—তথ্যপ্রমাণের আগে কাউকে কালো জাদুকর বা ডাইনি আখ্যা দেওয়া শুধু অন্যায় নয়, সমাজের অগ্রগতির পথেও এক বড় বাধা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ