
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ঈদুল আজহার আনন্দ ও উৎসবকে সামনে রেখে দেশের প্রতিটি কোণে মানুষ যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর দেশের নানা প্রান্তের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করার সুযোগ পেতে সবাই চেষ্টা করছেন সময়মতো যাত্রার বন্দোবস্ত করতে। এই বিশেষ সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন ব্যবস্থা সুষ্ঠু ও সহজ পথে চালানোর লক্ষ্যে দূরপাল্লার বাস মালিকদের সংগঠন বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করেছে ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রির কার্যক্রম।
আজ (১৬ মে) থেকে শুরু হওয়া এই টিকিট বিক্রি চলবে সকাল ছয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত, যাতে করে যাত্রীরা দীর্ঘ ঈদ ছুটির দিনগুলোতে তাদের পছন্দের গন্তব্যে নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর জন্য যথেষ্ট সময় ও সুযোগ পান। এ বছর টিকিট বিক্রি শুরু হওয়া মূলত ২৯ মে এবং তার পরবর্তী দিনের জন্য নির্ধারিত। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দূরপাল্লার যাত্রীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই স্বস্তি দেখা দিয়েছে কারণ তারা আগে থেকে টিকিট সংগ্রহ করে নিজেদের যাত্রা পরিকল্পনা নিশ্চিত করতে পারছেন।
বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ গত ১৪ মে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে ১৬ মে থেকে দেশের সকল দূরপাল্লার বাসের জন্য অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে। যাত্রীরা বাসের টিকিট অনলাইনের মাধ্যমে এবং সরাসরি বাস কাউন্টার থেকে কেনার সুবিধা পাবেন। তবে কিছু পরিবহন সংস্থা শুধুমাত্র অনলাইনে টিকিট বিক্রি করবে বলে রাকেশ জানান, যা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও যাত্রীদের জন্য টিকিট সংগ্রহকে সহজতর করতে সহায়ক হবে।
তিনি আরও জানান, ভাড়া নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বিআরটিএ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুসরণ করতে হবে এবং কোনো পরিবহন মালিক অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ পাবে না। এ বিষয়ে পরিবহন মালিকদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যাতে যাত্রীদের প্রতি অন্যায় না হয় এবং যাত্রা নির্বিঘ্ন হয়।
ঈদযাত্রার সময় গত বছরের মতো এসি বাসের ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি এড়াতে এবারে বিশেষ নজরদারি চালানো হবে বলে জানানো হয়েছে। কারণ, সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা এসি বাসের ভাড়া যাত্রীদের জন্য বেশ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাকেশ বলেন, "সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকলেও পরিবহন মালিকেরা নিজেদের সেবার মান বিবেচনা করে ভাড়া নির্ধারণ করে থাকেন। এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে, এসি বাসের ভাড়া যেন যুক্তিসংগত ও যাত্রী গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে থাকে।"
এই পদক্ষেপের ফলে যাত্রীরা দীর্ঘ দূরত্ব পাড়ি দেয়ার সময় অতিরিক্ত আর্থিক চাপের সম্মুখীন হবেন না বলে আশা করা যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব যাত্রী পরিবারের ছোট ছোট সদস্যদের নিয়ে ঈদ উদযাপনে যাত্রা করছেন, তাদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা হতে চলেছে।
বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, শুধু টিকিট বিক্রয়ের সুষ্ঠু আয়োজনই নয়, বরং ঈদযাত্রায় যাত্রীদের নিরাপত্তা, আরামদায়ক পরিবহন ও সময়মত সেবা প্রদানের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাসগুলো নিয়মিত মেরামত এবং সেবার মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, ট্রাফিক আইন মেনে চলা এবং অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই রোধ করার জন্য পরিবহন মালিকরা সচেষ্ট থাকবেন।
তবে যাত্রীদেরও নিজেদের দায়িত্ব নিতে হবে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে যাত্রা করতে হবে, বিশেষ করে মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
অনলাইন টিকিট বিক্রির মাধ্যমে যাত্রীদের জন্য এখন আর দীর্ঘ লাইন ধরতে হবে না, কাউন্টারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট কেনা যাত্রাকে অনেক সহজ ও দ্রুততর করেছে। এতে করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যাত্রীরাও নির্ভয়ে তাদের টিকিট সংগ্রহ করতে পারছেন। এই ডিজিটালাইজেশন যাত্রায় বেশ কিছু পরিবহন সংস্থা ইতোমধ্যে টিকিট বিক্রির পুরো প্রক্রিয়াটিকে অনলাইনে স্থানান্তর করেছে, যা অন্যদের জন্যও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ঈদুল আজহার মতো বড় ধর্মীয় উৎসবের সময় দেশের প্রায় প্রতিটি জেলা-উপজেলা থেকে লাখ লাখ মানুষ রাজধানীসহ বিভিন্ন বড় শহর থেকে গ্রামে যাত্রা করেন। ফলে এই সময় গণপরিবহন ব্যবস্থার চাপ অপরিসীম বেড়ে যায়। সঠিক সময়ে ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাত্রীদের সুবিধা নিশ্চিত করাই সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিকদের প্রধান দায়িত্ব।
বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো একযোগে কাজ করে এই ঈদযাত্রাকে নিরাপদ, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও স্মরণীয় করে তুলতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। যাত্রীদের পক্ষ থেকে প্রত্যাশা, সব ধরনের অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে যেন তাদের যাত্রা আনন্দময় হয় এবং তারা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঈদ উৎসব পালন করতে পারেন।
এই ঈদযাত্রায় সুষ্ঠু পরিবহন সেবার মাধ্যমে দেশের মানুষ যেন ভালো সময় কাটাতে পারেন, সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি সকল কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট থাকবেন বলেই আশা করা যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ