
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহায় মুক্তি পেতে যাচ্ছে একটি ব্যতিক্রমী সিনেমা—‘উৎসব’। তবে এই ‘উৎসব’ শুধুই একটি চলচ্চিত্রের নাম নয়, বরং এটি একটি আবেগ, এক ধরনের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা, একঝাঁক তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রীর একসঙ্গে পর্দায় ফিরে আসার বিশেষ মুহূর্ত। দর্শকদের উদ্দেশে সিনেমার নির্মাতারা একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছেন—‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ।’ এই স্লোগানটিই ইঙ্গিত দিচ্ছে, এটি একটি খাঁটি পারিবারিক ঘরানার চলচ্চিত্র, যা শুধু বিনোদন নয়, বরং পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে একত্রে বসে দেখার মতো এক মানবিক, আবেগঘন অভিজ্ঞতা।
সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি অভিজাত ক্লাবে এক জমকালো সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘উৎসব’ সিনেমার ঘোষণা ও এর বিশাল তারকাবহরের পরিচয় দেওয়া হয়। দেশসেরা অভিনয়শিল্পীদের একসঙ্গে পর্দায় ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন নির্মাতা তানিম নূর, যিনি নিজেই সিনেমাটির মূল ভাবনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন। এই সিনেমার প্রযোজক প্রতিষ্ঠান ডোপ প্রোডাকশন্স এবং সহ–প্রযোজনায় রয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি।
১১ তারকার মহামিলন: এক ফ্রেমে সোনালি প্রজন্ম ও বর্তমান
‘উৎসব’ সিনেমার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ—এর অসাধারণ তারকাবহর। এক ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন এমন একঝাঁক শক্তিশালী অভিনেতা-অভিনেত্রী, যাঁরা প্রত্যেকেই বাংলাদেশের অভিনয়জগতের শীর্ষ আসনে অধিষ্ঠিত।
এই ছবিতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, জয়া আহসান, অপি করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, আজাদ আবুল কালাম, ইন্তেখাব দিনার, সুনেরাহ বিনতে কামাল, সৌম্য জ্যোতি এবং সাদিয়া আয়মান। এমন বৈচিত্র্যময় ও অভিজ্ঞতায় ভরপুর একটি কাস্টিং সচরাচর দেখা যায় না, আর এই বিশাল তারকামণ্ডলীই এই সিনেমাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
নির্মাতা তানিম নূরের কথা: স্বপ্ন থেকে বাস্তবায়ন
পরিচালক তানিম নূর জানান, ‘উৎসব’ ছিল তাঁর দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন। “আমি চাইছিলাম একটি এমন সিনেমা বানাতে, যেটি পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে দেখতে পারবে, হাসবে, কাঁদবে এবং নিজেদের জীবনের সঙ্গে সংযোগ খুঁজে পাবে। সেই স্বপ্ন থেকেই ‘উৎসব’ নির্মাণের পরিকল্পনা শুরু করি। এখন সেটি বাস্তবে রূপ নিয়েছে।”
তিনি জানান, ‘উৎসব’ শুধু একটি গল্প নয়, বরং এটি একটি সম্পর্ক, একটি রিইউনিয়ন, একটি আবেগের বহিঃপ্রকাশ। সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন তানিম নূর নিজে, তাঁর সঙ্গে ছিলেন আয়মান আসিব স্বাধীন, সুস্ময় সরকার এবং শিমুল হক। সিনেমাটির চিত্রগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন বিখ্যাত সিনেমাটোগ্রাফার রাশেদ জামান, যিনি এর আগে বহু গুণগত মানসম্পন্ন কাজের জন্য প্রশংসিত হয়েছেন।
অভিনেতাদের অভিমত: একসঙ্গে থাকার আনন্দ
প্রবীণ অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, “দীর্ঘদিন পর এমন একটি প্রজেক্টে কাজ করেছি, যেখানে আমরা অনেকেই একসঙ্গে ছিলাম। সেই যে সহশিল্পীদের সঙ্গে একসাথে কাজ করার আনন্দ—সেটি এখানে পূর্ণতা পেয়েছে। আমি নিশ্চিত, দর্শকরাও একই আনন্দে ভাসবেন।”
অভিনেত্রী আফসানা মিমি বলেন, “সিনেমার সেই স্লোগানটাই আমাকে না বলার সুযোগ দেয়নি—‘পরিবার ছাড়া দেখা নিষেধ।’ আমরা অনেকদিন ধরে একটা এমন সিনেমার অপেক্ষায় ছিলাম, যেখানে পরিবার নিয়ে দেখার মতো কিছু থাকবে। ‘উৎসব’ সেই খরা মেটাবে বলেই বিশ্বাস।”
অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী জানান, “এটা এমন একটি কাজ, যেখানে আমরা সবাই মিলে একটা অনুভব করেছি। সেটে আমরা যেমন আনন্দে ছিলাম, তেমনি এই আনন্দটা দর্শকদের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে চাই।”
অভিনেত্রী অপি করিম বলেন, “এই প্রজন্ম আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে দেখেনি। একসঙ্গে পর্দায় ফিরছি বলেই ‘উৎসব’-এ কাজ করার লোভ সংবরণ করতে পারিনি। চাই, দর্শকেরা বুঝুক আমরা এখনো কাজ করছি, ভালো কাজ করছি।”
গল্প ও পরিবেশনা: পরিবার, সম্পর্ক, রোমাঞ্চ আর নস্টালজিয়া
‘উৎসব’ সিনেমার গল্প আবর্তিত হয়েছে একটি পরিবারের চারপাশে, যেখানে সম্পর্ক, ভুল বোঝাবুঝি, হারিয়ে ফেলা মানুষজন এবং আবার একসাথে হওয়ার ইচ্ছা—সবকিছু মিলেমিশে এক আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। চলচ্চিত্রের আবহে আছে হাসি, কান্না, রোমাঞ্চ, নস্টালজিয়া এবং জীবনের গভীর দার্শনিকতা।
পরিচালক জানিয়ে দিয়েছেন, এই সিনেমা কোনো একক চরিত্রনির্ভর নয়। এটি একটি সমবেত কাহিনি—যেখানে প্রতিটি চরিত্রের আলাদা আবেদন, গভীরতা এবং প্রভাব রয়েছে। সিনেমার টোনও তাই বাস্তবতা ও আবেগের মাঝামাঝি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে, যা দর্শকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে সক্ষম হবে।
ঈদে মুক্তি: বড় পর্দায় দেখার আহ্বান
‘উৎসব’ মুক্তি পাচ্ছে ২০২৫ সালের ঈদুল আজহা উপলক্ষে। এই সিনেমা বড় পর্দায় মুক্তি পেলেও চরকির সহ–প্রযোজনায় থাকায় ভবিষ্যতে এটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পরিচালক তানিম নূর বলেন, “আমি চাই, দর্শকরা সিনেমা হলে যাক, পরিবার নিয়ে যাক, হাসুক, কাঁদুক, একসাথে সময় কাটাক। ‘উৎসব’ আমাদের সবার—পরিবার, বন্ধু, সমাজ, সম্পর্ক আর ভালোবাসার উৎসব।”
বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতে যেখানে পারিবারিক সিনেমার ঘাটতি দিন দিন বাড়ছে, সেখানে ‘উৎসব’ একটি সাহসী, সচেতন এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি শুধু একাধিক তারকার সম্মিলিত একটি সিনেমা নয়, বরং এক ধরনের সামাজিক বার্তাবাহক, যা পরিবারকে আবার একত্রে বসিয়ে সিনেমা দেখার সেই পুরোনো অভ্যাস ফিরিয়ে আনতে পারে।
‘উৎসব’ নিছক একটি সিনেমা নয়, এটি একটি অনুভব, একটি ভালোবাসা, একটি উৎসব—বাংলাদেশি সিনেমার নতুন আশার নাম।
বাংলাবার্তা/এমএইচ