
ছবি: সংগৃহীত
দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সঠিক ও পক্ষপাতহীনভাবে সংরক্ষণ ও প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকরভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, যেখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ড. ইউনূসের এ নির্দেশনা মূলত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনার বিরুদ্ধে গভীর উদ্বেগ থেকে এসেছে। তিনি মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরা না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বৈঠকে জানান, মন্ত্রণালয় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে যে সব স্থাপনা ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের বিস্তৃত চিত্র ফুটে উঠেনি। "কেবলমাত্র এক পরিবারের ছবি ও সরঞ্জাম প্রদর্শন করে অতিরঞ্জিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান ও রণাঙ্গনের বাস্তবতা লোপ পেয়েছে," তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি আরও জানান, 'বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন' শীর্ষক গবেষণা প্রকল্পের জন্য ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও প্রকৃত গবেষণা তেমন কোনো কার্যক্রমে পরিণত হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া অর্থ সঠিকভাবে কাজে লাগানো হয়নি বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ সম্পত্তি, সুযোগ-সুবিধা ও অর্থের ব্যবহার একপ্রকার দলীয়করণের আশ্রয় পেয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত অবকাঠামোতে রাজনৈতিক দলের রাজনীতি চলছে এবং মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে থাকা অরক্ষিত সম্পত্তিগুলো যথাযথ ব্যবস্থাপনায় নেই।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই সম্পত্তিগুলো মূল্যবান সম্পদ; এগুলো ব্যবস্থাপনায় স্পষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।”
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে থাকা সম্পত্তির সদ্ব্যবহার এবং ট্রাস্টের কার্যক্রম পুনরুজ্জীবিত করতে অতিদ্রুত একজন পরামর্শক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্যকর কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “কল্যাণ ট্রাস্টের কাজ কী কী হতে পারে এবং তাদের আওতাধীন সম্পত্তিতে কোন ধরনের এন্টারপ্রাইজ গড়ে তোলা সম্ভব, সে বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এই ট্রাস্টকে আবার প্রাণবন্ত করতে হবে।”
বৈঠকে ড. ইউনূস সংশ্লিষ্ট সকলকে পরামর্শ দেন, আগামীদিনে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সব প্রকল্পের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হোক। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের স্বার্থে ঐতিহাসিক তথ্য ও প্রামাণ্য দৃষ্টিভঙ্গি ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
বৈঠকে বর্তমান সরকারের সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নেয়া ও বাস্তবায়িত বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও আগামী ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা প্রধান উপদেষ্টার সামনে উপস্থাপন করা হয়।
এভাবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রক্ষায় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা পালনের জন্য সরকারী মহল ও সংশ্লিষ্টরা একযোগে কাজ করতে হবে বলে প্রত্যাশা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা।
মুক্তিযুদ্ধের সত্যিকারের ইতিহাস রক্ষা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এ ধরনের দিকনির্দেশনা সময়োপযোগী এবং দেশের ঐতিহাসিক গৌরব রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ