
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বাংলাদেশ সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যমুনা এবং এর আশপাশের এলাকাকে ‘সংবেদনশীল’ হিসেবে চিহ্নিত করে সব ধরনের জনসমাগম, মিছিল, সমাবেশ ও অন্যান্য কর্মসূচি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ও ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মো. সরওয়ার হোসেনের স্বাক্ষরে মঙ্গলবার (৮ জুলাই) এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়, বুধবার (৯ জুলাই) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয়সংলগ্ন এলাকা, যমুনা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকার—হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ক্রসিং, কাকরাইল মসজিদ ক্রসিং, অফিসার্স ক্লাব ক্রসিং ও মিন্টু রোড ক্রসিংয়ের মধ্যবর্তী এলাকায়—যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, গণজমায়েত, মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে। এই নির্দেশ ডিএমপি অর্ডিন্যান্স-১৯৭৬ (অর্ডিন্যান্স নং III/৭৬)-এর ২৯ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কার্যকর করা হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিভিন্ন দাবিদাওয়াকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে আন্দোলনের ঢল নেমেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সূত্র ধরে যমুনার সামনে বেশ কয়েকবার বিক্ষোভ হয়েছে। এর আগেও ডিএমপি এ ধরনের জমায়েত থেকে বিরত থাকতে আন্দোলনকারীদের সতর্ক করেছিল। তবে আন্দোলনকারীরা তা উপেক্ষা করে বারবার ওই এলাকায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করেছে।
সর্বশেষ সোমবার (৭ জুলাই) চাকরিচ্যুত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর একদল সাবেক সদস্য ৩ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যমুনার সামনে অবস্থান নিতে চেয়েছিলেন। যদিও পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন জমায়েত শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলার ঝুঁকি নয়, বরং প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডিএমপির জারি করা গণবিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে। আইন ভঙ্গ করে কেউ এসব এলাকায় জমায়েতের চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, জনগণের জানমাল, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষায় এই সিদ্ধান্ত অনিবার্য ছিল। এ ধরনের এলাকাগুলোতে যেকোনো ধরনের কর্মসূচি, হোক তা রাজনৈতিক, পেশাদার বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে সংগঠিত—সবই সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান সরকারপ্রধানসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ঘিরে যেহেতু নানা ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে যমুনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সরব এবং কড়া অবস্থানে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক কিছু আন্দোলনে যে ধরনের জনসমাগম লক্ষ্য করা গেছে, তাতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রশ্নে প্রশাসন সতর্ক হয়ে উঠেছে।
তবে আন্দোলনকারীরা এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে নাগরিক অধিকার সংকোচনের পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তাদের অভিযোগ, সরকারের পক্ষ থেকে বিরোধী মত ও শান্তিপূর্ণ গণজমায়েতকে দমন করার জন্যই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
ডিএমপি জানিয়েছে, কেউ যদি এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে যমুনার আশপাশে জমায়েত বা কোনো কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এমনকি আটক, গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের মতো পদক্ষেপও নেওয়া হতে পারে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইতোমধ্যে রাজধানীর ওই এলাকা ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের। বিভিন্ন ক্রসিংয়ে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজনদের তল্লাশিও চালানো হচ্ছে।
ডিএমপির এই নিষেধাজ্ঞা কতদিন থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দূর না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সরকার ও প্রশাসন আপাতত রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে যেকোনো ধরনের জনসমাগম, বিক্ষোভ বা আন্দোলন ঠেকাতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এর ভবিষ্যৎ প্রভাব কতটা গভীর হবে, তা নির্ভর করছে পরবর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক উত্তেজনার গতিপথের ওপর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ