
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে চলতি বছর ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে মানবাধিকার পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে হতাশাজনক এবং উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে বলে এক বিশ্লেষণাত্মক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটি (এইচআরএসএস)। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম সোমবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও দেশের মানুষ এখনও সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের যথাযথ সুফল পায়নি।
বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল ভীতিকর ও সংকটপূর্ণ, যেখানে গত আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলেও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আসেনি। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানবাধিকার সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সন্তোষজনক সফলতা দেখাতে পারেনি।
২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের এই মানবাধিকার পরিস্থিতির অবস্থা পর্যালোচনা করে এইচআরএসএস আরও জানিয়েছে যে, গত ছয় মাসে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের মৃত্যু, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, নারীর প্রতি নিপীড়ন ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনাগুলো বেড়েছে। এছাড়া বাকস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা, শ্রমিকদের ওপর হামলা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, মাজারে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা এবং কারাগারে মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এই সময়কালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সভা-সমাবেশে বাধা দেওয়া, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলা, চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে যা সাধারণ মানুষের মাঝে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
বিশেষত, ২০২৫ সালের শুরুতে এক নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক সংগঠন ছাত্রলীগের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রচারের বিষয়টি কেন্দ্র করে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি, শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের অফিস ও নেতাদের বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারের রায় ঘোষণার পর বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট’ ও শাহবাগ বিরোধী ঐক্যের মধ্যে উত্তেজনা ও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। গত ১২ মে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে বিরোধ ও সংঘর্ষের কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এবং রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন দাবিতে রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে।
আদালত ও কারা ফটকে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং থানায় পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি মুক্তির ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে, সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান পরিচালিত হলেও কিছু অভিযোগ উঠে, যেখানে অনিয়ম ও অত্যাচারের বিষয়ও উত্থাপিত হয়েছে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) সীমান্ত লঙ্ঘন, বেড়া নির্মাণ, উসকানি, বাংলাভাষী মানুষের পুশইন, নিরীহ বাংলাদেশি হত্যা, আহত ও গ্রেপ্তার এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মির বাংলাদেশি জাহাজ আটক, সীমান্তে গুলি, মাইন ও মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনাগুলোও মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এই বিস্তৃত পর্যবেক্ষণ মূলত বাংলাদেশের মানবাধিকার অবস্থা এবং সামাজিক নিরাপত্তার দিক থেকে গভীর চিন্তার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। দেশের চলমান রাজনৈতিক ও সামাজিক সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান হয়েছে যাতে বাংলাদেশে সকল নাগরিকের মৌলিক অধিকার রক্ষা পায় এবং শান্তি ও সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ