
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাই চলচ্চিত্রে শাকিব খান নামটি একাই এক প্রতিষ্ঠান। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে রূপালি পর্দায় রাজত্ব করে চলেছেন তিনি। শত প্রতিকূলতা, সমালোচনা, উত্থান-পতন পেরিয়ে এখনো তিনিই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল নায়ক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। তার অভিনীত সিনেমার সংখ্যা, ব্যবসাসফলতার হার, তারকাখ্যাতি ও স্থায়িত্ব সবই একটি রেকর্ড।
তবে আজকের এই আলোচনা শাকিব খানকে নিয়ে নয়, বরং তাকে যাঁরা খুব কাছ থেকে দেখেছেন, পর্দা ভাগ করে নিয়েছেন, সেই তিনজন জনপ্রিয় নায়িকার অভিজ্ঞতা ও মূল্যায়ন ঘিরে। অপু বিশ্বাস, জয়া আহসান ও তমা মীর্জার চোখে শাকিব খান কেমন শিল্পী, সহশিল্পী ও মানুষ—সেই গল্প নিয়েই এই বিশেষ প্রতিবেদন।
অপু বিশ্বাস: শাকিব খান পরিশ্রমী, বিনয়ী ও সহযোগিতাপরায়ণ
শাকিব খানের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে সফল ও দীর্ঘস্থায়ী জুটি হিসেবে যদি কাউকে আলাদা করে নাম নিতে হয়, তবে সেটা নিঃসন্দেহে অপু বিশ্বাস। এই জুটি একসঙ্গে ৭২টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন, যা দেশের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড।
শাকিব খানকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনা অপু বিশ্বাস বলেন, “তিনি একজন বিনয়ী ও পরিশ্রমী মানুষ। যেকোনো চরিত্রের জন্য নিজেকে তৈরি করতে প্রস্তুত থাকেন সবসময়। তার মধ্যে একটি অনন্য মানসিক দৃঢ়তা আছে, যেটা তাকে এতদূর নিয়ে এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “নায়ক হিসেবে শাকিব খানের সবচেয়ে বড় গুণ হচ্ছে—নতুন শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি সহশিল্পীদের অসম্মান করেন না, বরং তাদের সহযোগিতা করেন। এটা এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যেটা সব বড় তারকার মধ্যেই দেখা যায় না।”
শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের অনেক সিনেমা ছিল বক্স অফিস হিট। এ প্রসঙ্গে অপু বলেন, “এতো সংখ্যক সিনেমা আমরা একসঙ্গে করতে পেরেছি শুধুমাত্র দর্শকদের ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে। শাকিব খানের যে সিনেমায় থাকে, দর্শক সেই সিনেমা দেখতে চান—এটা তার প্রতি বিশ্বাসের জায়গা।”
জয়া আহসান: শাকিব খান নিজেকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছেন
দেশের সবচেয়ে প্রশংসিত অভিনেত্রীদের একজন জয়া আহসান, যিনি সমান্তরালে দুই বাংলাতেই সফলতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন। শাকিব খানের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ এবং সর্বশেষ ‘তাণ্ডব’ সিনেমায়।
জয়া বলেন, “শাকিব খান নিজেকে সময় ও চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে জানেন। তার মধ্যে উন্নতির যে চেষ্টা আছে, তা একজন শিল্পী হিসেবে খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “তিনি খুব সিরিয়াস ও ফোকাসড অভিনেতা। চরিত্র নিয়ে ভাবেন, তার গভীরে প্রবেশ করতে চান। এতদিন ধরে ক্যারিয়ার ধরে রাখতে হলে কেবল জনপ্রিয়তা নয়, চরিত্র ও কন্টেন্টের প্রতি দায়বদ্ধতাও থাকতে হয়। সেটা তার মধ্যে আমি দেখেছি।”
‘তাণ্ডব’ সিনেমার শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে জয়া বলেন, “আমি দেখেছি শাকিব কতটা কমিটেড ও প্যাশনেট তার কাজে। তিনি প্রতিটি দৃশ্যে সেরাটা দিতে চান, সেজন্য পুনরায় টেক নিতেও দ্বিধা করেন না। এই ধরনের মনোভাব একজন শিল্পীকে এগিয়ে নেয়।”
তমা মীর্জা: শাকিব খান একজন তুলনাহীন তারকা
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী তমা মীর্জা শাকিব খানের সঙ্গে দুটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তাকে নিয়ে বলতে গিয়ে তমা বলেন, “শাকিব খান আনপ্যারালাল। তার কোনো তুলনা হয় না, তিনিই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। দীর্ঘদিন ধরে যে জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন, তা অসাধারণ এক অর্জন।”
তমা মীর্জা বলেন, “শাকিব খান আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য খুব দরকার। কারণ, তিনি অনেক বছর ধরে একাই সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমন দায়িত্ব অনেক বড় সাহসের বিষয়।”
শাকিব খানের অভিনয় নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “তিনি এখন আর কেবল গ্ল্যামার নির্ভর নায়ক নন, চরিত্রভিত্তিক অভিনয়ের দিকেও মনোযোগী হয়েছেন। তার সাম্প্রতিক কাজগুলোতে আমরা সেই চেষ্টার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “শুধু তারকা হিসেবে নয়, একজন সচেতন শিল্পী হিসেবেও শাকিব খান নিজের জায়গা তৈরি করেছেন। এ কারণেই তার সিনেমা এখনও দর্শকরা ভালোবেসে দেখেন।”
তিনজন তিন ঘরানার নায়িকা—অপু বিশ্বাস, জয়া আহসান ও তমা মীর্জা—যারা নিজ নিজ জায়গায় সফল, তাদের প্রত্যেকের মুখে একই সুর: শাকিব খান একজন কর্মঠ, সহনশীল, বিনয়ী ও দায়িত্বশীল অভিনেতা। জনপ্রিয়তার পাশাপাশি সহশিল্পী ও নির্মাতাদের প্রতি তার আন্তরিকতা, পরিশ্রম এবং নিরবিচারে কাজের প্রতিশ্রুতি—এইসব কিছুই তাকে আলাদা করে।
বাংলাদেশি সিনেমার ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী ও সফল নায়কের তালিকায় শাকিব খান নিঃসন্দেহে সবচেয়ে উজ্জ্বল নাম। আর সহকর্মীদের মূল্যায়ন প্রমাণ করে, শুধু দর্শক নয়, শাকিব তার সহশিল্পীদের হৃদয়েও জায়গা করে নিতে পেরেছেন।
এটাই একজন কিংবদন্তির প্রকৃত বৈশিষ্ট্য।
বাংলাবার্তা/এমএইচ