
ছবি: সংগৃহীত
নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের বাকি ৫০টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছে বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়মিত আর্থিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার অংশ বলে জানানো হয়েছে।
ইসির সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ সোমবার (৮ জুলাই) সাংবাদিকদের বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নিবন্ধিত সব দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় দলটিকে চিঠি দেওয়া হয়নি।’
২০০৮ সালে প্রণীত রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন অনুযায়ী, প্রতিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে প্রতি বছর আগের পঞ্জিকা বছরের আয় ও ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে হয়। হিসাবপত্র জমার সর্বশেষ সময় নির্ধারিত ৩১ জুলাই পর্যন্ত।
এই হিসাবের সঙ্গে নিরীক্ষা প্রতিবেদনও জমা দিতে হয়। যদি কোনো দল টানা তিন বছর হিসাব জমা না দেয়, তাহলে নিবন্ধন বাতিলের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে আইনে।
বর্তমানে দেশে মোট ৫১টি দল নিবন্ধিত, যার মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন গত মে মাসে একটি ট্রাইব্যুনাল আদেশে স্থগিত হয়। সেই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন বিচারাধীন থাকলেও কমিশন আপাতত দলটিকে নিবন্ধিত দলের তালিকা থেকে বিরত রেখেছে।
সূত্রমতে, যারা নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে, তাদেরকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও দলিলপত্র দেওয়ার জন্য ১৫ দিন সময় দিতে যাচ্ছে ইসি।
এই সময়ের মধ্যে দলগুলোকে নিবন্ধন শর্ত পূরণের হালনাগাদ তথ্য, যেমন—জেলা শাখা গঠনের প্রমাণ, গঠনতন্ত্র, নিয়মিত কাউন্সিল, কমিটি, নিরীক্ষিত হিসাবসহ প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে বলা হবে।
নিবন্ধন প্রত্যাশী দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মঞ্চ, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (ভিন্ন দল), জাগপা (ভিন্ন দুটি ধারা) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি।
নির্বাচন কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, দলগুলোর মধ্যে অনেকেই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয় না। অনেক দল বছরের পর বছর ইসিতে হিসাব না দিয়ে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে।
কোনো দল রাজনৈতিক কর্মসূচি না করলেও, নিবন্ধন থাকায় তারা জোটভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেয় বা নির্বাচনে প্রতীক পায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেশ কিছু দল বছরের পর বছর ইসিতে শূন্য আয়-ব্যয়ের হিসাব দিয়ে দায় সারছে। এই তথ্য যাচাই না হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে অর্থের অস্বচ্ছ প্রবাহ এবং জবাবদিহির অভাব তৈরি হয়।
নির্বাচন কমিশন চাইছে, ৩১ জুলাইয়ের আগেই দলগুলোর থেকে তথ্য নিয়ে নিবন্ধন অব্যাহত রাখার উপযুক্ততা মূল্যায়ন করতে। এর মাধ্যমে কমিশন ভবিষ্যতে অকার্যকর দলগুলোকে বাদ দেওয়ার আইনি ভিত্তি তৈরি করতে পারবে।
আওয়ামী লীগের আয়-ব্যয়ের হিসাব গ্রহণ না করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক ইসি কর্মকর্তা জানান, ‘যেহেতু দলটির নিবন্ধন স্থগিত, তাই বর্তমান প্রক্রিয়ায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। যদি আদালতের আদেশে নিবন্ধন ফিরে আসে, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী তাদের হিসাব চাওয়া হবে।’
ইসি সূত্রে জানা গেছে, চিঠিপ্রাপ্ত দলগুলোর হিসাব যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট দলকে ডেকে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অসংগতি ধরা পড়লে দলটির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
এ প্রসঙ্গে সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতেই এই চিঠি পাঠানো হয়েছে। এটি নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ।’
নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগ রাজনৈতিক দলের আর্থিক স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। একইসঙ্গে, নতুন দলগুলোর জন্য নির্ধারিত সময়সীমা নির্দিষ্ট করে তাদের আইনি কাঠামো ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি যাচাই করার সুযোগ তৈরি করছে ইসি।
এই প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন হলে, রাজনৈতিক অঙ্গনে অকার্যকর বা ভুয়া দলের নিবন্ধন রোধ এবং জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য রাজনৈতিক কাঠামো উপস্থাপন—দুই ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল আসবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ