
ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীতে সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবার দেশের শীর্ষস্থানীয় মিডিয়া গ্রুপ বসুন্ধরা মিডিয়াকেও হুমকি দিয়েছেন। গত রোববার (৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে কালের কণ্ঠ পত্রিকার একটি প্রতিবেদনের কমেন্ট বক্সে তিনি বসুন্ধরা মিডিয়াকে লক্ষ্য করে হুমকি উচ্চারণ করেন, যা আবারো দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ওই অনলাইনে মন্তব্যে স্পষ্ট করে বলেন, ‘সাংবাদিকদের নয়, বসুন্ধরা মিডিয়াকেই হুমকি দিয়েছি।’ এর আগেও রাজশাহীতে সাংবাদিকদের প্রতি তার হুমকির বিষয়টি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল। তবে এবার তিনি দেশের অন্যতম বড় ও প্রভাবশালী মিডিয়া গ্রুপকে সরাসরি টার্গেট করেছেন, যা রাজনৈতিক ও মিডিয়া মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
রোববার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকা থেকে শুরু হওয়া এনসিপির পদযাত্রায় অংশ নিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ কটুক্তি করে বলেন, “খুনি হাসিনার পক্ষে বসুন্ধরা মিডিয়া যে ভূমিকা পালন করেছে, আমরা তা কখনো ভুলতে পারব না।” তিনি আরও দাবি করেন, “বসুন্ধরা গ্রুপের সাংবাদিকরা আবারও নগ্নভাবে অপরাধের বৈধতা দিতে মাঠে নেমেছেন। তারা আরেকটি এক-এগারো ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছেন, যা জনগণ কখনোই বরদাশত করবে না।”
এমন বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রভাব ও স্বতন্ত্রতা বিবেচনায় নেয়া হলে এ ধরণের অভিযোগ ও হুমকি গুরুত্বসহকারে নেওয়া হচ্ছে।
রাজশাহীতে সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংবাদিকদের হুমকি থেকে শুরু করে বড় বড় মিডিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এমন অভিযোগের কারণে সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একাধিক বিশ্লেষক মনে করছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের এমন আচরণ দেশে গণমাধ্যম ও প্রকাশনার স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এ ধরনের হুমকিকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা উল্লেখ করেছে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষা করা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা গোষ্ঠী যদি সাংবাদিকদের কিংবা মিডিয়া প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দেয়, তা সরাসরি বাক-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি স্বরূপ।
একাধিক বিশ্লেষক মনে করেন, বসুন্ধরা মিডিয়ার প্রতি প্রকাশিত এ হুমকি প্রমাণ করে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মধ্যে একটি বিরূপ সম্পর্ক গভীর হচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে।
রাজশাহী পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় নজরদারি শুরু করেছে বলে জানা গেছে। পুলিশের কাছে প্রশ্ন উঠছে, এমন হুমকি ও উত্তেজনাপূর্ণ বক্তব্যের বিরুদ্ধে কী ধরনের আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে? পাশাপাশি বসুন্ধরা মিডিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রাজশাহী থেকে উঠে আসা এই ঘটনায় দেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক উত্তেজনার সমন্বয় কতটা সম্ভব হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এধরনের হুমকি ও অভিযোগ দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি নেতিবাচক সংকেত হিসেবেই গণ্য হচ্ছে।
পরিস্থিতির দ্রুত স্বাভাবিক হওয়া এবং সব পক্ষের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে সমাধান হওয়া দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ