
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব স্বাস্থ্যখাতে জটিল রোগের সঠিক ও দ্রুত নির্ণয় একটি দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে সময়ক্ষেপণ, অভিজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট এবং সঠিক রোগ নির্ণয়ের ঘাটতি রোগীর জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে। এই সংকট মোকাবেলায় মাইক্রোসফট উদ্ভাবন করেছে ‘এআই ডায়াগনস্টিক অর্কেস্ট্রেটর’—একটি ভার্চুয়াল মেডিকেল টিম, যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে চিকিৎসার গুণগত মান ও কর্মদক্ষতা ব্যাপকভাবে উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এই নতুন প্রযুক্তিটি পাঁচজন এআই চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল, যারা একসঙ্গে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। প্রতিটি এআই চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্ব পালন করে: একজন রোগের সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান করে, অন্যজন প্রয়োজনীয় পরীক্ষার সুপারিশ দেয়, আবার অন্যজন পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যাখ্যা প্রদান করে। এই প্রক্রিয়াটির নাম ‘চেইন অব ডিবেট’ বা যুক্তির শৃঙ্খল, যা এক ধরনের ডিজিটাল যুক্তিতর্কের মাধ্যমে চূড়ান্ত নির্ণয়ে পৌঁছায়। এর ফলে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়া মানুষ চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি কার্যকর ও নির্ভুল হয়ে উঠেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ‘এআই ডায়াগনস্টিক অর্কেস্ট্রেটর’ কেবল নির্ভুল নির্ণয়ই করে না, পাশাপাশি রোগ নির্ণয়ের পেছনের যুক্তিগুলো বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম, যা চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করে। এছাড়া, এই প্রযুক্তি চিকিৎসার ব্যয় কমাতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। খরচ সচেতন এই এআই প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত টেস্ট এড়িয়ে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নির্ধারণ করে, যার ফলে চিকিৎসায় লাখ লাখ ডলার সাশ্রয় সম্ভব হচ্ছে।
এই এআই চিকিৎসা টুল তৈরিতে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি যেমন ওপেনএআই, গুগল, মেটা ও অ্যানথ্রপিকের ভাষা মডেল ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে OpenAI-এর GPT-4Bo মডেল সবচেয়ে ভালো কার্যকারিতা প্রদর্শন করেছে।
স্বাস্থ্যসেবায় দ্রুততার সঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধি ও মানবসম্পদের অভাব পূরণে এ ধরনের প্রযুক্তি ভবিষ্যতে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করবে বলে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন। শিগগিরই মাইক্রোসফট কোপাইলট ও বিং সার্চ প্ল্যাটফর্মে ‘এআই ডায়াগনস্টিক অর্কেস্ট্রেটর’ যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে এই প্রযুক্তি সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সহায়তায় আরও সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে।
মাইক্রোসফটের এই এআই চিকিৎসা প্রযুক্তি শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে কার্যকরতা ও নির্ভুলতা বাড়াবে না, বরং চিকিৎসা ব্যয়ও কমিয়ে সাশ্রয়ী করে তুলবে, যা বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য এক বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ বলে গণ্য হচ্ছে। এভাবেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে স্বাস্থ্যসেবায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন হতে যাচ্ছে, যা বিশ্বের কোটি কোটি রোগীর জন্য সেবা পেতে সহজ করবে ও জীবনমান উন্নত করবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ