
ছবি: সংগৃহীত
ডার্ক ওয়েবে বিশাল পরিমাণে পাসওয়ার্ড ও লগইন তথ্য ফাঁস হওয়ায় সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে মারাত্মক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সাইবারনিউজের তথ্য অনুযায়ী, একবারে প্রায় ১৬ বিলিয়ন (১৬০ কোটি) পাসওয়ার্ড এবং লগইন রেকর্ড ডার্ক ওয়েবে প্রকাশিত হয়েছে, যা এক ধরনের নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই বিপুল তথ্য ফাঁসের ফলে গুগল, অ্যাপল, ফেসবুক, টেলিগ্রাম, গিটহাব সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অনলাইন সেবার নিয়ন্ত্রণ সাইবার অপরাধীদের হাতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইবারনিউজের গবেষক দল, বিশেষ করে ভিলিয়াস পেতকাউস্কাসের নেতৃত্বে শুরু হওয়া তদন্তে অসুরক্ষিত অবস্থায় একটি বিশাল ডাটাবেস ওয়েব সার্ভারে পাওয়া গিয়েছে, যার মধ্যে ছিল ১৮৪ মিলিয়ন রেকর্ড। এরপর আরও বিশদ অনুসন্ধানে মোট ৩০টি আলাদা ডাটাসেট পাওয়া যায়, যার প্রতিটিতে ৩.৫ বিলিয়ন পর্যন্ত রেকর্ড রয়েছে।
এই ডাটাসেটগুলোতে রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার লগইন তথ্য, ভিপিএনের ব্যবহারকারী তথ্য, কর্পোরেট ও ডেভেলপার প্ল্যাটফর্মের ডেটা এবং ২০২৫ সালের শুরু থেকে সংগৃহীত তথ্য।
ভিলিয়াস পেতকাউস্কাস জানান, এই তথ্য ফাঁস মূলত ইনফোস্টিলার ম্যালওয়্যার নামের একটি ক্ষতিকারক সফটওয়্যারের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। এই ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর অনুমতি ছাড়াই ব্রাউজারে সংরক্ষিত ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড কপি করে সাইবার অপরাধীদের সার্ভারে পাঠিয়ে দেয়।
এই তথ্যগুলো এমনভাবে সংগঠিত যে, প্রতিটি এন্ট্রিতে একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের ইউআরএল, ব্যবহারকারীর নাম এবং সংশ্লিষ্ট পাসওয়ার্ডের তথ্যসহ রয়েছে। অর্থাৎ, কারা কোথায় লগইন করেছেন, কবে করেছেন, এবং কী কী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন তা সম্পূর্ণভাবে জানা সম্ভব।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এত বিশাল পরিমাণ তথ্য ফাঁস হওয়ার ফলে ব্যক্তিগত, কর্পোরেট ও সরকারি সুরক্ষায় বিপুল ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ব্যাংকিং, অনলাইন শপিং, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মেল সেবা, এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল সেবা গুলো সাইবার অপরাধীদের সহজলভ্য হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিচ্ছেন, এই তথ্যগুলো হ্যাকিং, ফিশিং, পরিচয় চুরি ও আর্থিক জালিয়াতির কাজে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতে পারে। যারা অনলাইনে নিরাপত্তা জোরদার করেননি, তাদের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা এখন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।
দ্রুত যেসব ওয়েবসাইটে আপনার পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেছেন, সেগুলোতে গিয়ে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন।
দুই স্তরীয় প্রমাণীকরণ (Two-Factor Authentication) সক্রিয় করুন।
অজানা বা সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক থেকে বিরত থাকুন।
পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনায় “পাসওয়ার্ড ম্যানেজার” ব্যবহার করে শক্তিশালী ও পৃথক পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।
সাইবারনিউজের গবেষক ভিলিয়াস পেতকাউস্কাস বলেন, “২০২৫ সালের শুরু থেকেই আমরা এই বিশাল তথ্য ফাঁসের ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে আসছি। এটি শুধু ডেটা লিক নয়, এটি সাইবার নিরাপত্তায় এক গুরুতর সংকেত, যা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্বের যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তাদের সাইবার সুরক্ষা আরও জোরদার করা আবশ্যক। বিশেষ করে সরকার ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে তথ্য সুরক্ষায় আরও আধুনিক ও শক্তিশালী প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ভয়াবহ তথ্য ফাঁসের ঘটনা আমাদের সামনে এক বড় সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে যে, নিরাপত্তার ঝুঁকি এড়াতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা ব্যক্তিগত ও জাতীয় তথ্যের নিরাপত্তা ভঙ্গ হয়ে ডিজিটাল অপরাধ ও জালিয়াতির শিকার হতে হবে সবাইকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ