
ছবি: সংগৃহীত
গাজা ইস্যুতে মতবিরোধের জেরে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) গাজা যুদ্ধকালীন নীতিগত মতবিরোধের জেরে তাচি হানেগবিকে পদচ্যুত করার তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু হানেগবির সেবার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তার ভবিষ্যৎ জীবনের সাফল্য ও সুস্বাস্থ্য কামনা করেছেন।
জানা গেছে, হানেগবির স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তার উপদেষ্টা গিল রাইখ। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান ও নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব নেবেন। ২০২২ সালে উপদেষ্টা হিসেবে যোগদানের আগে রাইখ ইসরায়েলের পারমাণবিক শক্তি কমিশনের উপপরিচালক ছিলেন।
লিকুদ দলের প্রবীণ নেতা ও ১৯৯০-এর দশক থেকে বিভিন্ন মন্ত্রিত্বে থাকা তাচি হানেগবি ‘গ্রীষ্মকালে’ নেতানিয়াহুর গাজা সিটি আক্রমণের পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি গত মাসে কাতারে হামাস নেতাদের ওপর চালানো ব্যর্থ হামলাতেও আপত্তি জানান।
এদিকে, নিজের বিবৃতিতে হানেগবি স্বীকার করেছেন যে তার সঙ্গে নেতানিয়াহুর মতবিরোধ ছিল। তিনি বলেন, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি প্রণয়নে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়াকে আমি একটি বিশেষ অধিকার মনে করি। সংবেদনশীল আলোচনায় স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ ও মতবিরোধের মধ্যেও পেশাদার সংলাপ বজায় রাখার সুযোগের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।
হানেগবি আরও সতর্ক করেন যে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের যোদ্ধারা এখনো বিভিন্ন ফ্রন্টে সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন। সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার মিশন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি। একইভাবে, গাজা উপত্যকার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে ক্ষমতাচ্যুত করা, তাদের নিরস্ত্র করা ও গাজাকে ইসরায়েলের জন্য হুমকি হিসেবে না রাখার দায়িত্বও এখনো পূরণ হয়নি।
নেতানিয়াহু নিজে এই যুদ্ধের লক্ষ্য হিসেবে তিনটি বিষয় নির্ধারণ করেছেন- সব জিম্মিকে ফেরানো, হামাসকে পরাজিত করা ও গাজাকে ইসরায়েলের জন্য হুমকিমুক্ত রাখা।
হানেগবি ৭ অক্টোবরের ‘ভয়াবহ ব্যর্থতার’ জন্য নিজের দায় স্বীকার করেন ও ইঙ্গিত দেন যে বিষয়টি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া জরুরি। তিনি বলেন, এই ঘটনাটি গভীরভাবে তদন্ত করা উচিত, যাতে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নেওয়া যায় ও জনসাধারণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়।
তিনি আরও বলেন, যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, যারা শারীরিক ও মানসিকভাবে আহত, তাদের প্রয়োজনের প্রতি আমাদের সবাইকে মনোযোগী ও দায়বদ্ধ থাকতে হবে। হানেগবি ইসরায়েলি সমাজে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বলেন, জাতির চিরস্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে এটি অপরিহার্য।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম কান জানিয়েছে, বরখাস্তের কয়েক দিন আগেও নেতানিয়াহু হানেগবিকে বলেছিলেন যে তিনি তার পদে থাকবেন, যদিও প্রধানমন্ত্রীর অসন্তুষ্টি নিয়ে তখনই গুঞ্জন ছিল।
নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো কানকে জানায়, হানেগবি গণমাধ্যমে তথ্য ফাঁস করছিলেন ও প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বকে দুর্বল করছিলেন। এছাড়া, নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহুও হানেগবির কাজে অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ পরিসর থেকেও একাধিক ব্যক্তি সম্প্রতি বিদায় নিয়েছেন। চিফ অব স্টাফ তাচি ব্রাভারম্যানকে লন্ডনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারও শিগগিরই সরকারি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিছু হিব্রু গণমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি আগামী মাসে পদত্যাগ করবেন ও পরবর্তী নেসেটে (ইসরায়েলি পার্লামেন্ট) নিরাপদ আসনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এর আগে গত নভেম্বরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে বরখাস্ত করেছিলেন নেতানিয়াহু। চলতি বছরই অবসর নিয়েছেন আইডিএফ চিফ অব স্টাফ হারজি হালেভি। ৭ অক্টোবরের ব্যর্থতার পর আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
তবে নেতানিয়াহু নিজে পদত্যাগের কোনো ইঙ্গিত দেননি ও হত্যাযজ্ঞের দায় নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি বারবার দাবি করেছেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ওই হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী, রাজনীতিক নেতৃত্ব নয়।
বর্তমানে মোসাদের প্রধান ডেভিড বারনেয়া হচ্ছেন একমাত্র শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তা, যিনি হামলার দিনও দায়িত্বে ছিলেন ও এখনো পদে বহাল আছেন।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল
বাংলাবার্তা/এমএইচ