
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোববার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিভিন্ন মুসলিম দেশের ইসলামি এনজিও প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সামাজিক ব্যবসায় আরও বেশি করে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ইসলামি এনজিওগুলোকে শুধু ত্রাণ ও সাহায্য প্রদানের বাইরে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলক সামাজিক ব্যবসায় নিজেদের উদ্যোগ বাড়ানোর মাধ্যমে গরীব জনগোষ্ঠীর জীবনমান পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে।
ড. ইউনূস তার বক্তব্যে বিশেষভাবে মানব জীবনের অন্যতম অপরিহার্য দিক স্বাস্থ্যসেবার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের বিশ্বে নারীদের স্বাস্থ্যসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়, তাদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা অনেক সময় দূরপ্রাপ্ত হয়। আমরা স্বাস্থ্যসেবাকে গরিবদের সহায়তার একটি কার্যকর উপায় হিসেবে বিবেচনা করি।” সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে এই সেবাকে পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে এমন মানুষের কাছে, যারা অর্থনৈতিক কারণে প্রাত্যহিক স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত।
ড. ইউনূস আরও বলেন, “সামাজিক ব্যবসা হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি যা অর্থনৈতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। এভাবেই গরিবদের সহায়তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি স্বনির্ভর হওয়ার পথ খুলে দেওয়া সম্ভব। বিশ্বজুড়ে তরুণদের সামাজিক ব্যবসায় আগ্রহী করে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে, যা সমাজ ও অর্থনীতির জন্য এক বিরাট সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে।”
এদিকে, বৈঠকে অংশগ্রহণকারি বিভিন্ন দেশের ইসলামি এনজিও নেতারা জানিয়েছেন, ড. ইউনূস পরিচালিত সামাজিক ব্যবসার ধারণা ও কার্যক্রম তাদের নিজ নিজ দেশে অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছে। তারা এই ধারণাকে আরও বিস্তৃত করে তাদের দেশেও সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দারিদ্র্য ও অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সমাধানে কাজ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন।
সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন তুরস্ক থেকে ইসলামি বিশ্বের এনজিও ইউনিয়নের (ইউএনআইডব্লিউ) মহাসচিব আইয়ুপ আকবাল, টার্কিশ আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের (এটিএএ) প্রতিনিধি মুহাম্মদ হুসেইন আক্তা, মালয়েশিয়া থেকে পারসাতুয়ান ওয়াদাহ পেন্সারদাসান উম্মাহ (ডব্লিউএডিএএইচ) ও ইউএনআইডব্লিউর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ফাওয়াজ বিন হাসবুল্লাহ, পাকিস্তান থেকে আলখিদমাত ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও ইউএনআইডব্লিউর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আবদুস শাকুর এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ইউএনআইডব্লিউর অডিটিং বোর্ড সদস্য ড. সালামুন বাসরি।
বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ছাড়াও বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সভাপতি অধ্যাপক মাহবুব আহমেদ, বাংলাদেশ সামরিক উইমেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও ইউএনআইডব্লিউর হাই অ্যাডভাইজরি বোর্ডের সদস্য এস এম রাশেদুজ্জামান, ইউএনআইডব্লিউর কাউন্সিল সদস্য ও কৃষিবিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আলী আফজাল এবং বিআইআইটির মহাপরিচালক ও আইআইআইটির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. এম. আবদুল আজিজ।
ড. ইউনূস তাঁর দীর্ঘ সময়ের সামাজিক ব্যবসার কাজ ও প্রচারণার অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, “সামাজিক ব্যবসা শুধু একটি অর্থনৈতিক ধারণা নয়, এটি পুরো বিশ্বকে বদলে দিতে পারে। এটা দরিদ্রতা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও পরিবেশসহ সমাজের নানা সমস্যা সমাধানে কার্যকর হাতিয়ার।” তিনি প্রত্যাশা প্রকাশ করেন যে, মুসলিম বিশ্বের ইসলামি এনজিওগুলো সামাজিক ব্যবসার ধারণাকে গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে এবং এ মাধ্যমে তাদের সমাজে টেকসই উন্নয়ন ঘটবে।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ড. ইউনূসের এ আহ্বান বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের এনজিওগুলোর জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে। সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে তারা শুধু সাহায্যদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী উন্নয়নে কাজ করতে পারবে। বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সমস্যার মোকাবেলায় এই পন্থাটি নতুন পথ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অতএব, এই উদ্যোগ মুসলিম বিশ্বের সামাজিক উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে, যা গরিব জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ও সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ