
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে বর্তমানে জঙ্গিবাদের কোনো অবস্থান নেই এবং জঙ্গিবাদ পুরোপুরি নির্মূল হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে এখন কোনো ধরনের জঙ্গি তৎপরতা নেই এবং বিষয়টি নিয়ে বিদেশি বিভিন্ন প্রতিবেদনে যে সন্দেহ বা অভিযোগ তোলা হয়, তা বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
রোববার (৬ জুলাই) হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রপ্তানি কার্গো তল্লাশি কার্যক্রম পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে এখন কোনো জঙ্গিবাদ নেই। আপনাদের মাধ্যমেই বলছি—গত ১০ বছরে কি আপনারা কোনো জঙ্গি তৎপরতার তথ্য পেয়েছেন? যখন দেশে sporadic কিছু ঘটনা ঘটেছিল, তখন মিডিয়া রিপোর্ট করেছিল। কিন্তু এখন তেমন কিছু নেই বলেই মিডিয়াও কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। এটা আমাদের সক্রিয় গোয়েন্দা কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে জনগণের সহযোগিতার ফল।”
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এক বক্তব্যে অভিযোগ করেছিলেন যে, বাংলাদেশি পাঁচজন নাগরিক জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারেন। এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমি ওই দেশের আইজিপি কী বলেছেন, তা জানি না। তবে আমাদের কাছে সরকারিভাবে এমন কোনো বার্তা আসেনি। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব তথ্য পেয়েছি, সেগুলোর বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি প্রেস রিলিজ প্রকাশ করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “যে পাঁচজনের কথা বলা হচ্ছে, তারা এখনো দেশে ফেরেনি। তারা বাংলাদেশে ফিরেছে—এমন কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। প্রয়োজনে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ করা হবে। তবে এখন পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে, এই পাঁচজনের সঙ্গে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি তৎপরতার সম্পৃক্ততা নেই।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, “মালয়েশিয়া থেকে যে তিনজন বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের বিষয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। তারা কেউই জঙ্গি নন। তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে। জঙ্গি সন্দেহে ফেরত পাঠানো হয়েছে—এই ধরনের খবর বিভ্রান্তিকর এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।”
তিনি বলেন, “দেশে ফেরত পাঠানো তিনজনের বিষয়ে আমরা তদন্ত করেছি এবং নিশ্চিত হয়েছি—তারা কোনো ধরনের চরমপন্থী বা জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বিদেশে বসবাসরত প্রবাসীদের বিষয়ে এমন সন্দেহজনক অভিযোগ আসা মানেই তারা অপরাধী—এমনটি ধরে নেওয়া ঠিক নয়।”
সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে মিডিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আপনাদের সহযোগিতাই আমাদের কাজকে সহজ করেছে। যখন দেশে sporadic জঙ্গি আক্রমণ বা হামলার চেষ্টা হয়েছিল, তখন সাংবাদিকরা তা সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরেছেন, জনগণকে সচেতন করেছেন। এটি আমাদের প্রতিরোধ গঠনে সহায়ক হয়েছিল। এখন আর তেমন কিছু নেই—এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে, আমরা সফল হয়েছি।”
তিনি আরও বলেন, “জঙ্গিবাদ একসময় আমাদের দেশে একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে বর্তমান সরকারের শক্ত অবস্থান, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সক্রিয়তা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অদম্য প্রচেষ্টায় সেটি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়, বরং নির্মূলের পথে।”
উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদ নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে অবিচল। তিনি বলেন, “আমরা আইন প্রয়োগের পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপেও জোর দিয়েছি। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। নাগরিকদের সহযোগিতায় এখন কোনো সংগঠিত জঙ্গি নেটওয়ার্ক আর বাংলাদেশে সক্রিয় নেই।”
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের হলি আর্টিজান হামলার পর থেকে সরকার জঙ্গিবাদ দমন কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়। এরপর থেকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি, র্যাব-পুলিশের বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে বহু জঙ্গি ধরা পড়ে এবং অনেক নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সর্বশেষ বক্তব্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হলো—বাংলাদেশ এখন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদমুক্ত একটি রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও একটি ইতিবাচক অবস্থান তৈরি করতে চায়। তবে তিনি সতর্ক করেছেন, এই শান্ত পরিবেশ বজায় রাখতে হলে সবাইকে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। সন্দেহজনক কোনো তৎপরতা দেখা গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ