
ছবি: সংগৃহীত
উগ্র জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের অভিযোগে মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়া ৩৬ জন বাংলাদেশির বিষয়ে সে দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বাংলাদেশ সরকার। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিচয়, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার সর্বশেষ অবস্থা জানতে কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে, ঢাকার পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার তদন্ত কার্যক্রমে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
শনিবার (৫ জুলাই) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত সপ্তাহে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের দেশে অবস্থানরত ৩৬ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যারা স্থানীয় উগ্র জঙ্গিবাদী কার্যক্রমের সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার সন্দেহে নজরদারির আওতায় ছিলেন। গ্রেফতারের পর মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিষয়টি জানার পরপরই কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশের হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে অভিযুক্তদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয়, মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরে তাদের অবস্থান, পেশা এবং অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য জানতে চেয়েছে। একই সঙ্গে হাইকমিশন তাদের আইনি অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কূটনৈতিক সহায়তা দেবে।”
বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অভিবাসন বিভাগে একাধিক চিঠি দিয়ে তথ্য আহ্বান করেছে এবং তাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকও করছে। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে উপস্থাপন করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ার আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে স্থানীয় জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততা, নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।
বাকিদের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। মালয়েশিয়ার পুলিশ বিভাগ ও জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (Special Branch) তাদের প্রযুক্তি নির্ভর তদন্তে বিভিন্ন প্রমাণ উপস্থাপন করছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এসব তদন্তে কোনো তথ্য প্রয়োজন হলে সহযোগিতার প্রস্তুতি রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলা হয়, “বাংলাদেশ সরকার সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ, সহিংস উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। দেশে কিংবা বিদেশে বসবাসরত কোনও বাংলাদেশি যদি এ ধরনের কার্যক্রমে যুক্ত থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনওরকম ছাড় দেয় না।”
সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে হাতে হাত রেখে বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি সতর্কতা অবলম্বন এবং সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, “বিদেশে অবস্থানরত প্রতিটি বাংলাদেশির উচিত স্থানীয় আইন-কানুন যথাযথভাবে পালন করা এবং এমন কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়ানো যা বাংলাদেশ ও প্রবাসী সমাজের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে পারে।”
বাংলাদেশ হাইকমিশন বলেছে, গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি তাদের কনস্যুলার সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। আইনিভাবে তারা যেন তাদের নিজস্ব প্রতিরক্ষা করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ঘটনাটি বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা পরিসরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আন্তর্জাতিক জঙ্গি নেটওয়ার্কে বাংলাদেশের প্রবাসীদের জড়িত থাকার অভিযোগ অতীতেও দেখা গেছে। তাই এমন অভিযোগকে গুরুত্বসহকারে দেখা এবং তদন্তে স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা দেখানো বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি রক্ষায় সহায়ক হবে।
মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার ৩৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে উগ্র জঙ্গিবাদের অভিযোগ একটি গুরুতর আন্তর্জাতিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ দমন নীতিতে অবিচল থেকে এই তদন্তে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তদন্তের পর যেসব তথ্য সামনে আসবে, তার ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। একই সঙ্গে এটি প্রমাণ করবে যে, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশ শুধু কথায় নয়, কার্যকর পদক্ষেপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ