
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র আশুরার তাৎপর্য তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বিবৃতিতে বলেছেন, অন্যায়, অবিচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মত্যাগ কেবল ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এই আত্মত্যাগ আমাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। আর বিগত ১৬ বছরে দেশের জনগণের ওপর আওয়ামী শাসকদের যে ভয়াবহ নিপীড়ন চলেছে, তা কারবালার প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনীর পৈশাচিকতা ও নিষ্ঠুরতার সঙ্গে তুলনীয়।
শনিবার (৫ জুলাই) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো বিএনপির বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তারেক রহমান। বিবৃতিটি স্বাক্ষর করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী।
তারেক রহমান বলেন, “১০ মহররম শুধু একটি দিন নয়, এটি অন্যায়-অত্যাচার আর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক চিরন্তন প্রতীক। হজরত ইমাম হোসেন (রা.) যেভাবে সত্য ও ন্যায়ের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন, তা চিরকালই দুনিয়ার নিপীড়িত, বঞ্চিত ও নির্যাতিত মানুষের জন্য প্রেরণা হয়ে থাকবে।”
তিনি বলেন, “কারবালার প্রান্তরে মহানবী (সা.)-এর প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ও তাঁর ঘনিষ্ঠ পরিবার ও অনুসারীদের নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ক্ষমতালিপ্সু এক ফ্যাসিস্ট শাসক ইয়াজিদ। সেই ইতিহাস শুধু এক শোক নয়, তা হলো ন্যায়, ইমান, ত্যাগ এবং প্রতিবাদের এক বিস্ময়কর অনুপম পাঠ।”
তারেক রহমান বলেন, “এই আত্মত্যাগ বিশ্বের প্রতিটি যুগে এবং প্রতিটি সমাজে অত্যাচার, অবিচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামী মানুষদের শক্তি যুগিয়েছে। পবিত্র আশুরা আমাদের আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি প্রতিরোধ ও প্রতিজ্ঞার দিনে রূপ নিয়েছে।”
তারেক রহমান তার বিবৃতিতে অত্যন্ত কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন বর্তমান ও সাম্প্রতিক সময়ের আওয়ামী শাসনের। তিনি বলেন, “গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে যে দুঃশাসন, ভোটাধিকার হরণ, গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, দমন-পীড়ন এবং সম্পদের লুণ্ঠন হয়েছে, তা ইতিহাসে নজিরবিহীন। জনগণের নির্বাচনের অধিকার কেড়ে নিয়ে একটি চরম ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে আওয়ামী লীগ।”
তিনি আরও বলেন, “এই সময়ে দেশের মানুষ শুধু মৌলিক অধিকার হারায়নি, তারা তাদের সম্মান, নিরাপত্তা, স্বাধীনতাও হারিয়েছে। এমনকি দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারারুদ্ধ রাখা হয়েছে। তাঁকে সুচিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। এই শাসন অব্যাহতভাবে চলছে নিষ্ঠুর প্রতিহিংসা ও ব্যক্তিগত হিংস্রতা থেকে উৎসারিত হয়ে।”
তারেক রহমান বলেন, “দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া যারা আজও ক্ষমতার নাটাই নাড়ছে, তারা অতীতে জনগণের ওপর যে ভয়াবহ নিপীড়ন চালিয়েছে, তা ইয়াজিদের বাহিনীর পৈশাচিকতার সঙ্গে তুলনীয়। তারা যেমন ইমাম হোসেন (রা.)-এর শান্তির বার্তা দমন করতে রক্তাক্ত তাণ্ডব চালিয়েছিল, তেমনি আজকের এই ফ্যাসিস্ট শাসকরাও দেশপ্রেমিক, মুক্তচিন্তার মানুষদের কণ্ঠরোধ করছে—গুম করছে, হত্যা করছে, ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।”
তিনি বলেন, “কারবালায় ইমাম হোসেন (রা.)-এর শাহাদাত যেমন জালিম ও ফাসেক শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের স্লোগান হয়ে উঠেছিল, তেমনি বাংলাদেশেও অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে এই চেতনা নিয়ে।”
তারেক রহমান বলেন, “আমরা যদি ইমাম হোসেন (রা.)-এর আত্মত্যাগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি, তাহলে আজকের বাংলাদেশে ন্যায়, ইনসাফ, মানবতা এবং মুক্ত গণতান্ত্রিক চর্চা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এটি আমাদের শুধু ধর্মীয় অনুশাসনের অনুস্মারক নয়, বরং একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আদর্শ।”
তিনি বলেন, “আজও আমরা সেই শক্তিকে চিহ্নিত করছি, যারা ইনসাফকে পদদলিত করে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে কণ্ঠরোধ করে, মানুষকে বিভ্রান্ত করে দুর্নীতির পাহাড় গড়ে তুলেছে। ইমাম হোসেন (রা.)-এর চেতনা আমাদেরকে প্রেরণা দেয় এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর।”
বিবৃতির শেষাংশে তারেক রহমান বলেন, “আমি শহীদ হজরত ইমাম হোসেন (রা.), তাঁর পরিবার ও সাহচর্যপ্রাপ্ত সঙ্গীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই এবং তাঁদের রুহের মাগফিরাত কামনা করি। তাঁদের আত্মত্যাগের আদর্শকে বুকে ধারণ করে, আমাদের উচিত এ দেশে জুলুম, দুঃশাসন ও ভ্রান্তির বিরুদ্ধে সত্য, ন্যায় এবং স্বাধীনতার সংগ্রামে অটল থাকা।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশে ইনসাফ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এই সংগ্রাম চলবে এবং ভবিষ্যতে যেন আর কোনো ইয়াজিদের অভ্যুদয় না ঘটে—সেজন্য ইমাম হোসেন (রা.)-এর চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতিকে জেগে উঠতে হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ