
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একাধিক চমক নিয়ে ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ১৬ সদস্যের দল। দীর্ঘ সময় পর আবারো টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পেয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করা তরুণ ব্যাটসম্যান নাঈম শেখ। এছাড়াও দলে ফিরেছেন ফিটনেসের দিক থেকে চোট মুক্তি পাওয়া পেসার তাসকিন আহমেদ এবং তারকা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
তবে অভিজ্ঞতা থাকলেও ফর্মহীনতার কারণে বাদ পড়েছেন সাবেক অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের পর থেকে এই ফরম্যাটে তার কোনো অর্ধশতক নেই। তার সঙ্গে পেস বোলার নাহিদ রানাও দলে জায়গা করতে পারেননি।
নাঈম শেখের জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি বিসিবির তরুণ প্রতিভাদের প্রতি একটি স্পষ্ট বার্তা যে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল করলে সুযোগ পাওয়া সম্ভব। নাঈম গত সিজনে ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে ভালো পারফরম্যান্স করেছেন এবং সেটি জাতীয় নির্বাচকদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে।
পেসার তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দলে প্রত্যাবর্তনও বড় কথা। বিশেষ করে পেসিং বিভাগের জন্য তারা দুইটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত। দীর্ঘদিন চোটের কারণে দল থেকে বাইরে থাকার পর এবার তাদের ফিটনেস ফিরে এসেছে এবং জাতীয় দলে যোগ দিতে প্রস্তুত তারা।
অন্যদিকে, ফর্মহীনতার কারণে বাদ পড়া নাজমুল হোসেন শান্ত এবং পেস বোলার নাহিদ রানার দলে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচকরা। বিশেষ করে শান্তের দীর্ঘ সময় ধরে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ফর্মে না থাকার বিষয়টি দলে তার অনুপস্থিতির প্রধান কারণ।
ওয়ানডে সিরিজ শেষ হওয়ার পর ১০ জুলাই থেকে শুরু হবে ২০ ওভারের লড়াই। সিরিজের প্রথম ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে পাল্লেকেলেতে, যেখানে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। পরের দুই ম্যাচ যথাক্রমে ডাম্বুলা এবং কলম্বোতে অনুষ্ঠিত হবে। সবগুলো ম্যাচ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হবে।
বাংলাদেশ দল: লিটন দাস (অধিনায়ক), তানজিদ তামিম, পারভেজ ইমন, নাঈম শেখ, তাওহীদ হৃদয়, জাকের আলী, শামিম পাটোয়ারী, মেহেদী মিরাজ, রিশাদ হোসেন, শেখ মেহেদী, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, তানজিম সাকিব, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই স্কোয়াডে পুরনো অভিজ্ঞ এবং নতুন প্রতিভাদের সমন্বয় ভালো হয়েছে। লিটন দাসের অধিনায়কত্বে তরুণরা অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিশে ভালো একত্রীকরণ করতে পারবে। বিশেষ করে পেস বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী করার জন্য তাসকিন ও সাইফউদ্দিনের মতো খেলোয়াড় খুব প্রয়োজন ছিল।
ঘরোয়া ক্রিকেটে চমৎকার পারফরম্যান্স দেখানো নাঈমের জাতীয় দলে অভিষেক বা প্রত্যাবর্তন তাকে আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে অন্যদিকে, ফর্মহীনতা ও দীর্ঘ সময় দলের বাইরে থাকা শান্তের জন্য নতুন করে নিজের জায়গা করে নেওয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ জানিয়েছেন, “দল তৈরি করার সময় আমরা পারফরম্যান্স, ফিটনেস ও বর্তমান ফর্মকে গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি তরুণ ও অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের মিশ্রণ আমাদের শক্তিশালী করবে। সিরিজের জন্য আমরা ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “শ্রীলঙ্কা শক্তিশালী দল, তাদের বিপক্ষে প্রতিটি ম্যাচে ভালো খেলতে হবে। আমাদের তরুণরা সুযোগ পাবে নিজেদের দারুণভাবে প্রমাণ করার।”
বাংলাদেশ ক্রিকেট সমর্থকরা অপেক্ষায় আছেন নতুন এই স্কোয়াডের খেলায়। বিশেষ করে তরুণ নাঈম শেখের পারফরম্যান্স নিয়ে আগ্রহ বেশি। অনেক সমর্থক মনে করেন, নাঈম জাতীয় দলে দীর্ঘদিন খেলতে পারবেন এবং দেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হতে পারেন।
শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই সিরিজ বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের জন্য আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির সুযোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ভালো খেলেই আগামী আসন্ন বড় টুর্নামেন্টের জন্য দল তৈরি করা যাবে।
আসন্ন শ্রীলঙ্কা সিরিজে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল যেন একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে, যেখানে তরুণ প্রতিভারা সুযোগ পাবে এবং অভিজ্ঞরা দিকনির্দেশনা দেবেন। প্রত্যাশিত এই সিরিজ ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য দারুণ কিছু মুহূর্ত উপহার দিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ