
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল তাদের ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম আর সংগ্রামের ফসল হিসেবে তারা প্রথমবারের মতো এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) নারী এশিয়া কাপের মূলপর্বে জায়গা করে নিয়েছে। শুধু একটি ম্যাচ নয়, পুরো বাছাই পর্বেই তাদের পারফরম্যান্স ছিল নিঃসন্দেহে অনবদ্য—দৃঢ়তা, আত্মবিশ্বাস এবং সম্মিলিত মানসিকতায় গড়ে তোলা জয়যাত্রার চূড়ান্ত রূপ মিলেছে এই কোয়ালিফিকেশনে।
দলটির অন্যতম অভিজ্ঞ সদস্য এবং দুইবারের সাফ জয়ী ডিফেন্ডার শিউলি বলেন, "যখন আমরা আমাদের গ্রুপটা দেখেছিলাম, তখন থেকেই মনে একটা বিশ্বাস জন্মেছিল। আমি আমার সহপাঠীদের বলেছিলাম, আমরা যদি মন থেকে, হৃদয় দিয়ে খেলি, তবে এই পর্যায় পেরিয়ে যেতে পারব। আমাদের লক্ষ্য ছিল স্পষ্ট। মাঠে সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা নিজেদের উজাড় করে দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে আমরা সফল হয়েছি।"
শিউলি আরও জানান, এখনও যদিও একটি ম্যাচ বাকি রয়েছে, তবে পুরো দলই দারুণ মুডে আছে। তবে এই অর্জনের পূর্ণতা আসবে শেষ ম্যাচ শেষে, যেটি তারা সম্মানজনকভাবে শেষ করে উদযাপন করতে চান। তিনি বলেন, "আমাদের আরও একটি ম্যাচ বাকি আছে। আমরা চাই পুরোপুরি ফোকাস নিয়ে শেষ ম্যাচটা খেলতে। তাই এখনই আমরা জোরালো উদযাপন করিনি। কিন্তু ইনশাআল্লাহ, শেষ ম্যাচের পর আমরা পুরো দমে আনন্দ করব।"
এই কোয়ালিফায়িং পর্বে শিউলি, আফঈদা, ঋতুপর্ণা, মারিয়া, তহুরারা দল হিসেবে দুর্দান্ত এক সংহতি গড়ে তুলেছিলেন। বিশেষ করে তুর্কমেনিস্তান ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচগুলোতে তারা নিজেদের সক্ষমতা ও মানসিক দৃঢ়তার প্রমাণ দিয়েছেন। প্রতিটি ম্যাচে পরিকল্পিত রক্ষণভাগ, দ্রুতগতির আক্রমণ আর দক্ষ মিডফিল্ডের সমন্বয়ে গড়া ফুটবল পরিবেশন করেছে দলটি।
এই সাফল্যের পেছনে দীর্ঘদিনের পরিশ্রম, ফেডারেশনের পৃষ্ঠপোষকতা এবং কোচিং স্টাফের অবদানকেও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন খেলোয়াড়রা। শিউলি বলেন, "এই সাফল্য একদিনে আসেনি। বছরের পর বছর ধরে আমরা কষ্ট করেছি। বৃষ্টি, গরম, কখনো সমালোচনার মুখে পড়েও আমরা থেমে যাইনি। মেয়েরা তাদের ক্যারিয়ারে অনেক কিছু ত্যাগ করেছে। আজ সেই কষ্টের ফসল হাতে পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য শুধুই একটি কোয়ালিফিকেশন না, বরং বাংলাদেশের নারীদের ফুটবলের একটি ইতিহাস।"
তাদের এই ইতিহাস গড়ার মুহূর্তে পুরো ফুটবলদল ছিল ঐক্যবদ্ধ ও মনোসংযোগে অটুট। ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়রা স্ট্রেচিং ও সুইমিংয়ের মাধ্যমে রিকভারি করেন, যাতে শেষ ম্যাচেও শতভাগ পারফরম্যান্স দিতে পারেন।
বাংলাদেশ নারী দলের এই সাফল্য শুধু ক্রীড়াক্ষেত্রেই নয়, গোটা দেশের ক্রীড়া সংস্কৃতি ও নারীর ক্ষমতায়নকেও এগিয়ে নেবে বলে বিশ্বাস বিশ্লেষকদের। কারণ এই অর্জন শুধুই একটি ফুটবল ম্যাচ জেতা নয়—এটি একটি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির জয়, একটি সাহসী প্রজন্মের সংগ্রামের ফসল।
এশিয়া কাপের মূলপর্বে উঠে যাওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রমাণ করে দিয়েছেন—পর্যাপ্ত সুযোগ, সঠিক প্রশিক্ষণ ও আত্মবিশ্বাস থাকলে নারীরাও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম।
শেষ ম্যাচে শতভাগ দিয়ে বাছাই পর্ব শেষ করার লক্ষ্য এখন চোখের সামনে। শিউলি, ঋতুপর্ণারা চান সেই ম্যাচটিও জিতে উদযাপন হোক আরও গৌরবময়, আরও স্মরণীয়। বাংলার নারী ফুটবলের এই জয়জয়কার অব্যাহত থাকুক, ইতিহাসের পাতায় যুক্ত হোক আরও নতুন নতুন অধ্যায়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ