
ছবি: সংগৃহীত
লিওনেল মেসি, ফুটবল ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তি। তার সঙ্গে মাঠে দেখা মানেই অনেকের জন্য আবেগ, স্মৃতি আর শ্রদ্ধার মুহূর্ত। রোববার রাতে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে ইন্টার মায়ামির হয়ে যখন মেসি নামলেন মাঠে, তখন প্রতিপক্ষ ছিলেন তারই পুরনো ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি)। ম্যাচের ফল মেসি ও তার দলের পক্ষে না গেলেও, ম্যাচ শেষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনিই। বিশেষ করে সাবেক সতীর্থ উসমান দেম্বেলেকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে এক আবেগঘন মুহূর্তের গল্প, যা এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ফুটবলে কিছু রাত থাকে, যেগুলো ভুলে যেতে চায় খেলোয়াড়েরা। ইন্টার মায়ামির জন্য রোববারের রাতটা ঠিক তেমনই। ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন পিএসজির মুখোমুখি হয়ে একদমই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি মেসির দল। প্রথমার্ধে একেবারেই নিষ্প্রভ ইন্টার মায়ামি কিছুটা গতি ফেরায় দ্বিতীয়ার্ধে, যেখানে দেখা গেছে মেসির কয়েকটি ব্যক্তিগত উদ্যোগ। কিন্তু সেটাও যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৪-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়ে ক্লাব বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয় মার্কিন ক্লাবটি।
তবু ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছে ভিন্ন এক কারণে—লিওনেল মেসিকে ঘিরে সাবেক সতীর্থদের উচ্ছ্বাস এবং বিশেষ করে দেম্বেলের আবেগী স্মৃতি-সংগ্রহ।
ম্যাচ শেষে পিএসজির একে একে সব খেলোয়াড় মেসির কাছে ছুটে আসেন। জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা, খিচা কাভারাস্কেইয়া, লুকাস এরনান্দেজ, ভিতিনিয়া, মারকিনিওস, আশরাফ হাকিমি—সবার চোখেমুখেই ছিল মেসিকে নিয়ে উচ্ছ্বাস ও সম্মান। মাঠেই অনেকে মেসির সঙ্গে আলিঙ্গন করেন, হাত মেলান, সেলফি তোলেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। পিএসজির ড্রেসিংরুমেও দেখা গেছে এই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে মেসির সঙ্গে কথা বলেন, ছবি তোলেন।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে গেছেন উসমান দেম্বেলে। পিএসজি তারকাদের মধ্যে মেসির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ এবং সাবেক সতীর্থ দেম্বেলে যেন স্মৃতির ভারে ভরপুর হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু ছবি তুলেই থেমে থাকেননি, দেম্বেলে সংগ্রহ করেছেন মেসির প্রায় সবকিছু—জার্সি, শর্টস, এমনকি বুটও।
ম্যাচের পর দেম্বেলে নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি ছবি পোস্ট করেন, যেখানে তিনি হাতে ধরে আছেন মেসির ১০ নম্বর জার্সি ও বুট। ছবির ক্যাপশনে লিখেছেন,
"তোমার সঙ্গে আবার দেখা হয়ে ভালো লাগছে। লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরা। আমি আশা করি তুমি ইন্টার মায়ামিকে নিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে আরও ইতিহাস গড়বে।"
এই পোস্টটিই মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। শুধু পোস্টেই নয়, নিজের ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতেও তিনি একাধিক ছবি শেয়ার করেন, যেখানে দেখা যায় মেসির শর্টস, বুট, জার্সি—সবই রয়েছে তার সংগ্রহে। বলা চলে, যে পোশাক পরে মেসি সেই রাতে খেলেছেন, তার সবই এখন দেম্বেলের কাছে।
তবে দেম্বেলের স্মৃতির খোঁজ এখানেই থেমে থাকেনি। তিনি একইভাবে মেসির সাবেক বার্সা সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ ও জর্দি আলবার কাছ থেকেও ম্যাচ শেষে জার্সি নিয়েছেন। এমনকি ইন্টার মায়ামির মালিক এবং ইংলিশ ফুটবল কিংবদন্তি ডেভিড বেকহামের সঙ্গেও তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছেন দেম্বেলে।
মেসি পিএসজিতে খেলেছেন ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। সে সময় একসঙ্গে খেলেছিলেন দেম্বেলের সঙ্গে। দুই মৌসুমের সেই সম্পর্ক, স্মৃতি আর সম্মানের বন্ধনই যেন আবার ফিরে এসেছিল এই ম্যাচের মাধ্যমে। ম্যাচের ফল যাই হোক, মেসি তার সাবেক সতীর্থদের হৃদয়ে কী পরিমাণ প্রভাব রেখে গেছেন, দেম্বেলের এই কাজ সেটির এক অসাধারণ প্রমাণ।
মাঠে ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু খেলোয়াড়দের ভালোবাসা, সম্মান আর সম্পর্ক রয়ে যায় দীর্ঘ সময়। লিওনেল মেসির মতো একজন খেলোয়াড় যখন মাঠে নামেন, তখন তার সান্নিধ্যটাই অনেকের জন্য চিরন্তন স্মৃতি। আর দেম্বেলে তো সেই স্মৃতিকে শুধু হৃদয়ে নয়, হাতেও ধরে রেখে দিয়েছেন। ক্লাব বিশ্বকাপের এই রাতটা হয়তো মেসির জন্য হতাশার, কিন্তু দেম্বেলের জন্য নিঃসন্দেহে আনন্দ আর গর্বের চূড়ান্ত মুহূর্ত।
বাংলাবার্তা/এমএইচ