
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আগামী ১৯ জুলাই রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি জাতীয় সমাবেশের আয়োজন করতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষে দলটি তাদের ঘোষিত সাত দফা দাবি তুলে ধরে দেশজুড়ে জনমত গঠনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রোববার (২৯ জুন) দলটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সমাবেশ ও দাবিসমূহের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, এ সমাবেশ শুধু রাজনৈতিক শোডাউন নয়, বরং এর মাধ্যমে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট থেকে উত্তরণে একটি বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানানো হবে। জামায়াত বলছে, “এই সাত দফা শুধু আমাদের দলের দাবি নয়, বরং এটা সমগ্র দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের গণতান্ত্রিক ও মানবিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে।”
জামায়াতে ইসলামী দাবি করেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক অধিকারের চরম লঙ্ঘন ঘটেছে। দলটির ভাষায়, ওই দিনসহ পরবর্তী সময়গুলোতে তাদের নেতাকর্মীদের ওপর যেভাবে নিপীড়ন চালানো হয়েছে, তা জাতিগত নিধনের শামিল। সেই ‘গণহত্যা’ ও অন্যান্য ঘটনায় বিচার দাবির পাশাপাশি দলটি রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে মৌলিক সংস্কারসহ একটি নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা গঠনের দাবিতে জনমত তৈরি করতে চায়।
যে সাত দফা দাবিতে হবে সমাবেশ
১. ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এবং অন্যান্য সময়ে সংঘটিত সকল গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করা
জামায়াতের দাবি, ওই সময়ের রাজনৈতিক অভিযানে বহু নেতাকর্মী নিহত, গুম, গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনার বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে হওয়া উচিত।
২. রাষ্ট্রের সব স্তরে মৌলিক সংস্কার
রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও বিচারিক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং নিরপেক্ষতা আনতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে দলটি।
৩. ঐতিহাসিক জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের পূর্ণ বাস্তবায়ন
দলটির মতে, ‘জুলাই সনদ’ ছিল একটি ঐতিহাসিক ঘোষণা, যাতে নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর রূপরেখা দেওয়া হয়েছিল। এটি বাস্তবায়ন হলে রাষ্ট্র হবে ন্যায়ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক এবং অংশগ্রহণমূলক।
৪. জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পরিবারের পুনর্বাসন
দলটির ভাষ্য অনুযায়ী, ‘জুলাই আন্দোলনে’ যারা শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাদের পরিবার আজও অবহেলিত। তাদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব বলে মনে করছে দলটি।
৫. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পিআর (Proportional Representation) পদ্ধতি চালু করা
জনগণের প্রকৃত মতামত নির্বাচনে প্রতিফলনের জন্য বিদ্যমান ভোট ব্যবস্থার পরিবর্তে অনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়েছে। এতে বড় দলগুলোর পাশাপাশি ছোট দলগুলোর জন্যও পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে জামায়াত।
৬. প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ
প্রবাসীরা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখলেও তাদের ভোটাধিকার প্রায় অনুপস্থিত। দলটি চায়, ডাক ভোট বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বাস্তবায়ন।
৭. সমান সুযোগ ও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা
নির্বাচনের সময় সরকার ও বিরোধী দলের প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করাকে ‘গণতন্ত্রের মৌলিক শর্ত’ হিসেবে দেখছে দলটি।
দলটির কেন্দ্রীয় নেতা সূত্রে জানা গেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় এই সমাবেশে দশ লাখের বেশি জনসমাগম ঘটানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে দেশের ৬৪ জেলা ও ৮টি বিভাগ থেকে নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ে সংগঠনকে সক্রিয় করা হয়েছে।
জামায়াত বলছে, সমাবেশে বক্তৃতা দেবেন দলের শীর্ষ নেতারা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, আইনজীবী, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরাও উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জামায়াতে ইসলামীর এই সাত দফা একটি বৃহৎ রাজনৈতিক কাঠামোগত সংস্কারের দিক নির্দেশ করে। বিশেষ করে পিআর পদ্ধতি চালুর প্রস্তাব নির্বাচন ব্যবস্থায় নতুন আলোচনা উস্কে দিতে পারে। তবে এ সমাবেশ কতটা জনসমর্থন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা তৈরি করতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও সরব হয়ে উঠতে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ৭ দফা দাবির ভিত্তিতে জাতীয় সমাবেশকে সামনে রেখে দলটি নিজেদের গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্র সংস্কারমূলক অবস্থান জোরদার করতে চায়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সমাবেশ শুধু জামায়াতের অস্তিত্ব ঘোষণা নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক ভারসাম্যের সম্ভাবনাও তৈরি করতে পারে—যদি তা শান্তিপূর্ণ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে সম্পন্ন হয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ