
ছবি: সংগৃহীত
ফুটবল বিশ্বে তারকাদের লড়াইয়ের অপেক্ষাকৃত একতরফা এক মঞ্চ হয়ে উঠল ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলো। ইউরোপীয় পরাশক্তি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন (পিএসজি) মুখোমুখি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মিয়ামির, যার নেতৃত্বে আছেন ফুটবল সম্রাট লিওনেল মেসি। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, নামের চেয়ে দলগত শক্তি এবং পারফরম্যান্সের ব্যবধান এতটাই বিশাল যে, এই লড়াই একরকম একতরফা হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের শুরু থেকেই। মেসির দল ৪-০ ব্যবধানে হার মেনে মাঠ ছেড়েছে, আর পিএসজি দাপটের সঙ্গেই জায়গা করে নিয়েছে কোয়ার্টার ফাইনালে।
রোববার রাতে অনুষ্ঠিত হওয়া এই ম্যাচে শুরু থেকেই পিএসজি তাদের শ্রেণির পরিচয় দিতে শুরু করে। ম্যাচের মাত্র ষষ্ঠ মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। ভিতিনিয়ার নেওয়া ফ্রি-কিক থেকে দারুণ একটি হেডে গোল করেন তরুণ পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস। সেই গোলের পরই যেন ম্যাচের গতিপথ স্পষ্ট হয়ে যায়।
৩৯তম মিনিটে দ্বিতীয় গোলটি আসে আবারও নেভেসের পা থেকে। ইন্টার মিয়ামির অধিনায়ক সার্জিও বুসকেটস মাঝমাঠে বল হারালে তৎক্ষণাৎ প্রতি-আক্রমণে যায় পিএসজি। সেই আক্রমণে বল পেয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে নিজের দ্বিতীয় ও দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন নেভেস।
দ্বিতীয়ার্ধে গোল বন্যা আরও প্রবল হয় ইন্টার মিয়ামির জন্য। ম্যাচের তৃতীয় গোলটি আসে আত্মঘাতীভাবে। পিএসজির ডান দিক থেকে হাকিমির একটি ক্রস মিয়ামির ডিফেন্ডার টমাস অ্যাভিলেস ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল পাঠান। এরপর ৭৫তম মিনিটে হাকিমি নিজেই চতুর্থ গোলটি করেন। যদিও তার প্রথম প্রচেষ্টা ক্রসবারে প্রতিহত হয়েছিল, ফিরতি বল পেয়ে এবার আর ভুল করেননি এই মরক্কোর ডিফেন্ডার।
পুরো ম্যাচজুড়ে গ্যালারিতে ছিল শুধুই মেসি উন্মাদনা। ৬৬ হাজার দর্শকের উপস্থিতির বড় একটি অংশ ছিল গোলাপি রঙের মিয়ামি জার্সিতে, কেউ কেউ আবার আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিয়ে এসেছিলেন শুধুমাত্র তাদের প্রিয় মেসিকে একনজর দেখতে। ‘মেসি...মেসি’ স্লোগানে মুখর ছিল গ্যালারি।
মাঠে অবশ্য সেই মেসিকে পাওয়া গেছে অনেকটাই নির্বিষ ভূমিকায়। মাঝেমধ্যে কয়েকটি দারুণ পাস, সুয়ারেজকে দেওয়া চোখ ধাঁধানো থ্রু পাস কিংবা দ্বিতীয়ার্ধে একটি ফ্রি-কিকে গোলের চেষ্টা—এই যা। কিন্তু কোথাও তা গোল কিংবা ম্যাচে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। ইন্টার মিয়ামির আক্রমণভাগ বারবার ব্যর্থ হয়েছে সুযোগ কাজে লাগাতে।
ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মেসি কিছুটা ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিলেও দলীয় পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। গোলমুখে তার ফ্রি-কিক বারের ওপর দিয়ে যায়, কয়েকটি পাস ঠিক মতো কাজে লাগাতে পারেননি তার সতীর্থরা। ফলে বড় ব্যবধানে হার এড়ানোর সামান্য সম্ভাবনাটুকুও কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি।
এই জয়ে পিএসজি নিশ্চিত করল ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের স্থান। পরবর্তী ধাপে তারা মুখোমুখি হবে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখের, যাদের সঙ্গে পিএসজির পুরনো ইউরোপীয় দ্বৈরথ অনেক নাটকীয়তায় ভরা।
একদিকে ইউরোপের টপ লেভেলের ফর্ম ও রসদে সজ্জিত পিএসজি, অন্যদিকে এমএলএস থেকে উঠে আসা নতুন এক শক্তি গঠনের চেষ্টা চালানো ইন্টার মিয়ামি—দুই দলের মানের ব্যবধান যে এতটা স্পষ্ট হবে, সেটা হয়তো অনেকেই ভাবেননি। তবে মাঠের পারফরম্যান্সই বলছে, ক্লাব বিশ্বকাপের মতো আসরে শুধু নাম আর খ্যাতি নয়, প্রয়োজন দলগত শক্তি ও গভীরতা।
এদিন মেসিকে ঘিরে গ্যালারিতে উন্মাদনার অভাব ছিল না, কিন্তু মাঠে তার উপস্থিতি দলের হার ঠেকাতে যথেষ্ট ছিল না। পিএসজি একপ্রকার পায়ের তলায় গুঁড়িয়ে দিয়ে গেল ইন্টার মিয়ামিকে। ফুটবল প্রেমীদের এখন অপেক্ষা—কোয়ার্টারে বায়ার্ন-পিএসজির সেই বহুল প্রতীক্ষিত মহাযুদ্ধের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ