
ছবি: সংগৃহীত
ভারত সরকার ২৮ জুন থেকে কার্যকর হওয়া একটি নতুন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট, পাটের রোল, পাটের সুতা, বোনা ফ্লেক্স কাপড় এবং বিশেষ ধরনের কাপড়সহ মোট নয় ধরনের পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় স্থলবন্দরগুলোতে ব্যাপক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের পেট্রাপোল, কাঁচরাপাড়া, বেড়িয়াগঞ্জ ও হিলি সহ বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী স্থলবন্দর ভিত্তিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হবে।
ভারতের শিল্পাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক সংকট দেখা দিতে পারে কারণ কাঁচাপাটের সরবরাহ বন্ধ থাকলে দেশের বিভিন্ন চটকলের উৎপাদন প্রভাবিত হবে। ভারতের চটকলগুলোর পাটজাত পণ্যের জন্য উচ্চমানের কাঁচাপাটের নির্ভরতা কম নয়, যা মূলত বাংলাদেশ থেকে আসে। ভারতের নিজস্ব পাট উৎপাদন দেশের চাহিদা মেটাতে অপ্রতুল।
এর আগে, গত ১৭ মে ভারত সরকার বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোল্ড ড্রিঙ্কস, প্লাস্টিক, কাঠের আসবাবপত্র, সুতা ও সুতা দিয়ে তৈরি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এর আগের মাসে, ৯ এপ্রিল কলকাতা বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এবার নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত হলো কাঁচা পাটসহ পাটজাত পণ্য।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো দীর্ঘস্থায়ী হলে ভারতের চটকল খাত আরও সংকটে পড়বে। পাটজাত শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা কমে আসবে এবং শ্রমিকদের কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জগদ্দলের জুট মিলের শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি ওমপ্রকাশ পান্ডে জানান, "কাঁচাপাট আমদানি বন্ধ হলে পাটজাত পণ্যের দাম বেড়ে যাবে এবং চটকলগুলো সমস্যায় পড়বে। বাংলাদেশ থেকে যে উচ্চমানের পাট আসতো, তা ছাড়া ভারতীয় পাট উৎপাদন অপর্যাপ্ত। আমরা কেন্দ্রীয় সরকারকে এই সমস্যার বিষয়ে চিঠি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।"
পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসত। নিষেধাজ্ঞার ফলে এই আমদানি নাটকীয়ভাবে কমে যাবে।
পেট্রাপোল স্থলবন্দরের ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, "বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের ফলে ইতিমধ্যেই বাণিজ্য কিছুটা কমে গিয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। পেট্রাপোল বন্দর সংলগ্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মারাত্মক প্রভাবিত হবে।"
দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বন্ধ হলে উভয় দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ভারতের পাটজাত শিল্প ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাণিজ্যিক নেতারা সরকারের কাছে দ্রুত এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছেন, যাতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য পুনরায় স্বাভাবিক হয় এবং পাটজাত শিল্প সচল থাকে। অন্যদিকে, তারা আশা করছেন দুই দেশের সরকার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করবে।
উল্লেখ্য, ভারত-বাংলাদেশের দীর্ঘ সীমান্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্যিক নানা ইস্যুতে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা ব্যবসায়ীদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাটসহ নয় ধরনের পণ্যের আমদানি নিষিদ্ধ করে ভারত সরকার নিষেধাজ্ঞা জারি করায় ভারতীয় পাটজাত শিল্পে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিক থেকে মালিকপক্ষ সবাই এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। সীমান্তবর্তী বন্দরগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রভাবিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে চটকলগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। দুই দেশের ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা পুনঃস্থাপনই একমাত্র কার্যকর উপায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ