
ছবি: সংগৃহীত
গাজা উপত্যকায় ফের ভয়াবহ রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। ইসরাইলি বাহিনীর টানা বিমান ও স্থল হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪০০ জনের বেশি। শনিবার (২৯ জুন) দুপুর পর্যন্ত এই প্রাণহানির খবর নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
ফিলিস্তিনিদের দাবি, অধিকাংশ হামলা চালানো হয়েছে গাজা শহরের বেসামরিক বসতিতে, যেগুলোর বেশিরভাগই বর্তমানে ঘরহারা শরণার্থীদের অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছিল।
সবচেয়ে বড় হামলাগুলোর একটি চালানো হয় গাজার একটি স্টেডিয়ামের আশপাশে। স্থানীয়রা জানান, ওই স্টেডিয়ামটি বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। সেখানে ইসরাইলের বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে শিশুরাও।
বিবিসি যাচাইকৃত ফুটেজে দেখা গেছে, ধ্বংসস্তূপে মানুষজন খালি হাতে ও কোদাল দিয়ে বালুর নিচে চাপা পড়া মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আহমেদ কিশাউই রয়টার্সকে বলেন, “এই এলাকাটি তাঁবুতে ভরে গিয়েছিল। এখন তারা সব বালুর নিচে। আমরা অনেক ঘণ্টা ধরে খুঁড়ে মরদেহ বের করছি। এখানে কোনো সন্ত্রাসী ছিল না, ছিল শুধু শিশু আর সাধারণ মানুষ।”
গাজার পশ্চিমাঞ্চলীয় আল-মাওয়াসি এলাকাতেও একাধিক হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক ও তাঁবুতে চালানো হামলায় সেখানে নিহত হয়েছেন আরও ১৪ জন, যাদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।
নিহতদের মধ্যে ছিল তিনটি শিশু এবং তাদের মা-বাবা, যারা ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত হন। তাদের দাদি সুয়াদ আবু তেইমা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “এই শিশুরা কী দোষ করেছিল? কেন ওদের জীবন নিতে হলো?”
শনিবার বিকেলে গাজার তুফফাহ এলাকায় জাফা স্কুলের কাছে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৮ জন, যাদের মধ্যে পাঁচজন শিশু। স্কুলটিতে এবং এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল শত শত ঘরছাড়া গাজাবাসী।
মোহাম্মদ হাবুব নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই হামলায় তার ভাগ্নে, বাবা এবং প্রতিবেশীদের সন্তানরা প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা তো শুধু বাঁচতে চেয়েছি, কোনো ক্ষতি করিনি। তাহলে কেন তারা আমাদের বারবার লক্ষ্য বানাচ্ছে?”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অনেক জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে অ্যাম্বুলেন্স এবং উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়া লাশগুলো উদ্ধারে ব্যর্থ হচ্ছেন। এতে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ঘোষিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিটি তিনটি ধাপে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তা ভেঙে যায় প্রথম ধাপেই। ওই চুক্তির আওতায় গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার, ফিলিস্তিনি বন্দিমুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির বিষয়টি ছিল আলোচনার অংশ।
বৃহস্পতিবার হামাসের এক শীর্ষ নেতা বিবিসিকে জানান, নতুন যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তির আলোচনায় মধ্যস্থতাকারীরা সক্রিয় হলেও ইসরাইল তাতে কোনো অগ্রগতি দেখাচ্ছে না।
অন্যদিকে গাজায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা ইসরাইলিদের মুক্তির দাবিতে শনিবার সন্ধ্যায় তেলআবিবে একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আয়োজকদের ভাষায়, “এই যুদ্ধের আর কোনো প্রয়োজন নেই। এখনই সময় সবাইকে ফিরিয়ে আনার, এক দফায়।”
গত মার্চে ইসরাইল গাজায় নতুন করে হামলা শুরু করলে নতুন করে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে উপত্যকাটি। ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে বহু।
নতুন করে শনিবার পর্যন্ত হওয়া এই হামলাগুলোর ফলে মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে গাজার অনেক অঞ্চল। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সামিল।
জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো শান্তি স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানালেও, এখন পর্যন্ত বড় কোনো অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়।
এই অবস্থায় ফিলিস্তিনিদের মূল আকুতি এখন— "শান্তি চাই, মৃত্যু নয়"।
বাংলাবার্তা/এমএইচ