
ছবি: সংগৃহীত
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার খুলনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে খুলনার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে জানিয়েছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ, উৎসবমুখর এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্রি ও ফেয়ার নির্বাচনের জন্য সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
শফিকুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্য বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচন প্রক্রিয়াটি সর্বাধিক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে এবং দেশের জনগণ তা উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপন করবে।
প্রেস সচিব উল্লেখ করেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশে একটি ভঙ্গুর অর্থনীতি ছিল, যার প্রভাব খুলনার জুট ও চিংড়ি খাতেও পড়েছে। তিনি বলেন, জুট শিল্প খাতের অবনতির ফলে খুলনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত মাত্রায় হয়নি। বিশেষ করে বেশ কয়েকটি জুট মিল বন্ধ হওয়ার ঘটনা সরকারের কাছে উদ্বেগজনক।
তবে তিনি আশ্বাস দেন যে, সরকার খুলনায় শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। খুলনায় একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং জুট মিলের স্কুলগুলো সরকারি করার মাধ্যমে শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, দেশের সকল জুট মিলের স্কুল সরকারি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা এলাকার শিক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।
শফিকুল আলম জানান, খুলনায় মোংলা বন্দর কেন্দ্রিক একটি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার কাজ ত্বরান্বিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রাইভেট সেক্টরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টার সাম্প্রতিক চীন সফরে এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাসও পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, আগামী দশক খুলনার জন্য উন্নয়নের দশক হবে এবং খুলনা পুরোনো গৌরব ফিরে পাবে।
তিনি আরও জানান, খুলনা অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় বেড়ীবাঁধ রক্ষা, ভবদহ নিয়ন্ত্রণ ও সুপেয় পানির প্রকল্প কার্যক্রম সরকার কর্তৃক চালানো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনের জন্যও বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রেস সচিব বলেন, খুলনায় গ্যাস সরবরাহ সঙ্কটে থাকা সত্ত্বেও জুতা ও ব্যাটারি শিল্পে উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে দক্ষ শ্রমিকের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করছে। তিনি আশ্বাস দেন যে, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর ভিসি নিয়োগের জন্য দ্রুততম সময়ে সার্চ কমিটি গঠন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রেস সচিব।
দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি বজায় থাকবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।
মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব সরকারী নীতিমালা ও পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এবং দেশের উন্নয়ন ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ