
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের টেস্ট ইতিহাসে যুক্ত হলো আরেকটি বিব্রতকর রেকর্ড। কলম্বোতে শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে ইনিংস ও ৭৮ রানে হেরে শুধু ম্যাচ ও সিরিজ হারেই ক্ষান্ত হয়নি টাইগাররা, সেই সঙ্গে গড়েছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড—টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইনিংস ব্যবধানে হারের তালিকায় তারা এবার পেছনে ফেলে দিয়েছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তিদেরও।
২০২৫ সালের শুরুর দিকে শ্রীলংকার মাটিতে অনুষ্ঠিত দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচটি কলম্বোর পি সারা ওভালে অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে গুটিয়ে যায় মাত্র ১৬৪ রানে। জবাবে শ্রীলংকা তোলে বিশাল স্কোর—৫৩২ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ করতে পারে মাত্র ২৯০ রান। ফলে ইনিংস ও ৭৮ রানের ব্যবধানে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয় টাইগাররা।
এই পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ টেস্ট ইতিহাসে ইনিংস ব্যবধানে হারের সংখ্যা নিয়ে পৌঁছে গেল ৪৭-এ। যা কিনা ভারতের ৪৬ ও অস্ট্রেলিয়ার ৪৬ ইনিংস হারের চেয়েও বেশি।
১৯৯৯ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ খেলেছে মোট ১৫৪টি টেস্ট ম্যাচ। এর মধ্যে জয় এসেছে মাত্র ২৩টি ম্যাচে, হার ১১২টিতে এবং ড্র হয়েছে ১৯টি ম্যাচ।
এই ১১২টি পরাজয়ের মধ্যে প্রায় ৪২ শতাংশই এসেছে ইনিংস ব্যবধানে, যা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ দলের জন্য লজ্জাজনক এক পরিসংখ্যান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং ব্যর্থতা, টেস্ট মানসিকতার অভাব এবং ধারাবাহিকতা না থাকাই এর জন্য দায়ী।
‘হাউস্ট্যাট’ পরিসংখ্যান অনুসারে, টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ইনিংস ব্যবধানে হারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন চতুর্থ। নিচে তালিকাটি তুলে ধরা হলো—
দল | ইনিংস ব্যবধানে পরাজয়ের সংখ্যা |
---|---|
ইংল্যান্ড | ৬৬ |
নিউজিল্যান্ড | ৫০ |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ৪৮ |
বাংলাদেশ | ৪৭ |
অস্ট্রেলিয়া | ৪৬ |
ভারত | ৪৬ |
শ্রীলংকা | ৪২ |
দক্ষিণ আফ্রিকা | ৩৯ |
পাকিস্তান | ৩৪ |
জিম্বাবুয়ে | ৩০ |
এ তালিকা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বাংলাদেশ ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো বহু অভিজ্ঞ ও সফল টেস্ট দলের চেয়েও বেশি বার ইনিংস ব্যবধানে হার মানতে বাধ্য হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পরাজয়ের অন্যতম কারণ হলো—টপ অর্ডারে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা, প্রথম ইনিংসে ভালো স্কোর না তোলা, এবং বোলারদের দীর্ঘ ইনিংসে প্রতিপক্ষকে থামাতে না পারা।
বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়েছে শ্রীলংকার বিপক্ষে সদ্যসমাপ্ত টেস্ট সিরিজে। দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছেন বড় জুটি গড়তে।
টেস্ট ম্যাচে সময়ের দাবি হলো ধৈর্য ও দৃঢ়তা, যেখানে বাংলাদেশ বরাবরই পিছিয়ে।
ক্রিকেট বোদ্ধাদের মতে, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশকে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দল হয়ে উঠতে হলে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দরকার। ঘরোয়া ক্রিকেটে মানোন্নয়ন, ফিটনেস ও মানসিক দৃঢ়তা উন্নত করা এবং ব্যাটিং-বোলিং উভয় বিভাগে দায়িত্বশীলতা বাড়াতে হবে।
বিশেষ করে দেশের বাইরের কন্ডিশনে টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুতি আরও ভালোভাবে নিতে হবে। বিদেশের উইকেটে কেমন খেলা উচিত, কোন ব্যাটিং কৌশল সবচেয়ে কার্যকর—এসব নিয়ে বিসিবি ও কোচিং স্টাফদের বেশি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ দলের ইনিংস ব্যবধানে ৪৭তম পরাজয় নিঃসন্দেহে একটি লজ্জার রেকর্ড। ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলকে এই দিক দিয়ে ছাড়িয়ে যাওয়াকে কোনোভাবেই ইতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে পুনর্গঠনের সময় এখনই। যদি এখনই পরিকল্পিত পরিবর্তন না আনা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন বিব্রতকর রেকর্ড কেবল বাড়তেই থাকবে।
এখন সময় নিজের ভুল বিশ্লেষণ করে টেস্ট ক্রিকেটে একটা শক্ত ভিত গড়ার। যে ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ দল কেবল রেকর্ড নয়, ইতিহাসও গড়বে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ