
ফাইল ছবি
আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সফরে এসে তিন ম্যাচের ওয়ানডে ও তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলতে যাচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেট দল। এই সফর নিয়ে গত কিছুদিন ধরে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার কিংবা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এই সফর নিয়ে কোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। ফলে, সব কিছু ঠিক থাকলে পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী এই সিরিজ অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।
গত কয়েক বছরে ভারত সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে একাধিক দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেট সিরিজ বাতিল হয়েছে। বিশেষ করে পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর বিপক্ষে সিরিজগুলো রাজনৈতিক কারণে প্রায়শই আটকে গেছে। এ কারণে বাংলাদেশ সফর নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছিল, বিশেষ করে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কিছু রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নতুন মাত্রার প্রেক্ষাপটে।
তবে বিসিসিআইয়ের এক কর্মকর্তা ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি না আসায় আমরা সিরিজের আয়োজন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। আমাদের কোনো আলোচনা হয়নি সিরিজ বাতিল কিংবা স্থগিত করার বিষয়ে। সরকার যদি কোনো নির্দেশনা দেয়, তখন বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সে ধরনের কিছু হয়নি।”
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পায়নি ভারতীয় দল। সবশেষ ২০২২ সালে সফরে এসেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হেরে দেশে ফিরেছিল তারা। সেই আক্ষেপ ঘোচাতে এবার শক্তিশালী দল নিয়েই আসার পরিকল্পনা করছে বিসিসিআই।
বিশেষ করে ওয়ানডে দল সাজাতে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে রেখেই পরিকল্পনা করছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। রোহিত ও কোহলি দুজনই কিছুদিন আগেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। সেই অবসর-পরবর্তী সময়েই তাদের ওয়ানডে মিশনে ফিরতে দেখা যাবে, যা ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তদের কাছে এক বড় আকর্ষণ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এপ্রিল মাসেই এই সিরিজের প্রাথমিক সূচি ঘোষণা করেছিল। সে অনুযায়ী, ১৭ আগস্ট ঢাকার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। এরপর দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে ২০ আগস্ট, একই ভেন্যুতে। সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডে হবে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, ২৩ আগস্ট।
ওয়ানডে সিরিজের পরপরই শুরু হবে টি-২০ সিরিজ। ২৬ আগস্ট চট্টগ্রামেই হবে প্রথম টি-২০। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচ ২৯ আগস্ট ঢাকায় এবং ৩১ আগস্ট মিরপুরে হবে শেষ টি-২০ ম্যাচ।
এটিই হবে ভারতের প্রথম টি-২০ সিরিজ বাংলাদেশে। এর আগে ভারত বহুবার বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট এবং ওয়ানডে খেললেও, কখনোই সংক্ষিপ্ততম ফরম্যাটের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেনি লাল-সবুজদের মাটিতে। এ কারণেও এই সিরিজকে ঘিরে উৎসাহ বেড়েছে।
তবে ভারতের টি-২০ দলের নিয়মিত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব হার্নিয়া অপারেশনের কারণে এই সফরে থাকতে পারবেন না বলে জানা গেছে। তার পরিবর্তে নেতৃত্ব দিতে পারেন হার্দিক পান্ডিয়া কিংবা শ্রেয়াস আইয়ারের মতো কেউ।
বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে ভারতীয় গণমাধ্যমে যেমন সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনা চলছে, তেমনি ক্রিকেটবিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে মাঠের ভেতরের উত্তেজনাকর লড়াইয়ের দিকেও। ২০২২ সালের পরাজয়ের পর ভারতীয় মিডিয়াতে বাংলাদেশের বিপক্ষে বেশ কিছু সমালোচনা ও ট্রোল ছড়িয়েছিল, যার জবাব দেওয়ার সুযোগ এবার পাচ্ছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এই সিরিজকে সামনে রেখে পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের মাটিতে এই বড় সিরিজ আয়োজনের মাধ্যমে বোর্ড একটি ইতিবাচক বার্তা দিতে চায় আন্তর্জাতিক মহলে—যে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে শান্তিপূর্ণ এবং ক্রিকেট আয়োজনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রিকেট সম্পর্ক বরাবরই ছিল উষ্ণ। ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের হারের পর কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হলেও, সামগ্রিকভাবে দুদেশের ক্রিকেট বোর্ডের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই বন্ধুত্বপূর্ণ। এই সিরিজটি যদি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে কূটনৈতিকভাবেও তা ইতিবাচক বার্তা দেবে বলে মনে করেন ক্রীড়া বিশ্লেষকরা।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী আগস্টে ভারতীয় দল পূর্ণ শক্তির স্কোয়াড নিয়েই বাংলাদেশ সফরে আসবে। মাঠে হবে রোহিত-কোহলি বনাম সাকিব-লিটনদের লড়াই, আর গ্যালারিতে থাকবে দুই দেশের কোটি ভক্তের দৃষ্টি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ