
ছবি: সংগৃহীত
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তার নিজের বৈধ অস্ত্রের খালি ম্যাগাজিন থাকার ঘটনা নিয়ে শুরু হওয়া বিতর্কে মুখ খুলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (৩০ জুন) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল, যার সঙ্গে কোনো ধরনের অপরাধমূলক বা ষড়যন্ত্রমূলক উদ্দেশ্য নেই।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “অনেকে বলছেন তিনি (আসিফ মাহমুদ) একে-৪৭-এর লাইসেন্স পেয়েছেন, যা সত্য নয়। আসলে এটি তার ব্যক্তিগত বৈধ অস্ত্রের একটি খালি ম্যাগাজিন ছিল, যা অসাবধানতাবশত তার ব্যাগে রয়ে গিয়েছিল।”
তিনি আরও যোগ করেন, “এটা ঠিক তেমন একটি ঘটনা, যেমন কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সময় চশমা নিতে গিয়ে ভুল করে মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে যান। মানুষ মাত্রই ভুল করতে পারে, আর এটি ঠিক তেমনই একটি ভুল। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ যদি আগেই জানতেন, তাহলে কোনো অবস্থাতেই এই ম্যাগাজিন সঙ্গে করে বিমানবন্দরে নিয়ে যেতেন না।”
রোববার (২৯ জুন) রাতে মরক্কো সফরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ার সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চেকপয়েন্টে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সহকর্মী সজীব ভূঁইয়ার ব্যাগ থেকে একটি অস্ত্রের খালি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসে এবং পরে খতিয়ে দেখা হয় এই ব্যাগটি কার এবং কীভাবে এই ম্যাগাজিন সেখানে এল।
পরবর্তীতে জানা যায়, এটি ছিল উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের নিজের লাইসেন্স করা একটি পিস্তলের খালি ম্যাগাজিন, যা ভুলবশত ব্যাগে থেকে যায়। ঘটনার পরপরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন এবং বিষয়টি যাচাই-বাছাই করেন।
এই ঘটনায় একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে—উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বয়স ৩০ না হওয়ায় তিনি কীভাবে অস্ত্রের বৈধ লাইসেন্স পেলেন?
এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “আমি যেহেতু অস্ত্র লাইসেন্স সংক্রান্ত সেই নির্দিষ্ট আইনটি এখনই দেখিনি, তাই এই বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছি না। তবে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি অস্ত্রের লাইসেন্স একটি সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি যাচাই করে দেখা হবে।”
এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি জানান, আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান পালিত হবে। সেই অনুষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে নিরাপত্তা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
“আমরা আশ্বস্ত করছি, এই সময়ে দেশজুড়ে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো সক্রিয় রয়েছে, এবং দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে,”—বলেন উপদেষ্টা।
উল্লেখ্য, আসিফ মাহমুদ বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন—যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে। তুলনামূলক কম বয়সেই তিনি এ পদে আসীন হয়েছেন, এবং নানা সামাজিক ও ক্রীড়া উদ্যোগের মাধ্যমে তিনি আলোচনায় এসেছেন। তবে এই প্রথমবারের মতো তার বিরুদ্ধে অস্ত্রসংক্রান্ত কোনো বিতর্ক সামনে এলো।
যদিও সরকারিভাবে এটিকে 'ভুল' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবু সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এমন ঘটনায় আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত, বিশেষ করে যাঁরা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। কারণ, অস্ত্র বা এর সামগ্রী নিয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবেশ করা নিঃসন্দেহে একটি সংবেদনশীল বিষয়।
বিমানবন্দরের মতো একটি নিরাপত্তা সংবেদনশীল এলাকায় অস্ত্রের ম্যাগাজিন পাওয়া গেলে তা চট করে জনমনে উদ্বেগ তৈরি করেই। তবে সরকার এ ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে নিশ্চিত করেছে যে, এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল এবং উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু করেননি। তারপরে প্রশ্ন উঠেছে অস্ত্র লাইসেন্স ও বয়সের বিষয়টি নিয়ে, যা নিয়ে সরকার পরবর্তী সময়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও সচেতনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ—বিশেষ করে যখন বিষয়টি নিরাপত্তার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এসে পড়ে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ