
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘদিন পর অবশেষে পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক আকাশযুদ্ধে ভারতের যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি সরকারি পর্যায়ে প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে দেশটি। এই স্বীকারোক্তি এসেছে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর উচ্চপর্যায়ের এক কর্মকর্তার কাছ থেকে, যা ইতোমধ্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলেছে। ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ায়ার এবং পাকিস্তানের জিও নিউজ তাদের পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সোমবার (৩০ জুন) প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় আয়োজিত একটি প্রতিরক্ষা সেমিনারে ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন শিব কুমার বলেন, “হ্যাঁ, আমরা কিছু যুদ্ধবিমান হারিয়েছি।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ৭ মে পাকিস্তান এয়ারফোর্সের (PAF) সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় বিমান ভূপাতিত হয়, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় আকাশযুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এ ঘটনাটি এতদিন অস্বীকার করা হলেও, এবার সরকারি পর্যায়ে এমন বক্তব্য নতুনভাবে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে, ঠিক কতটি বিমান ভূপাতিত হয়েছে—তা নির্দিষ্ট করে জানাননি ক্যাপ্টেন কুমার। বরং বলেছেন, “যত বলা হচ্ছে, ততটা নয়।”
জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে কাজ করে, যা আমাদের প্রতিবেশী কিছু দেশের মতো নয়।” এর মাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর কিছু কৌশলগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে, যেগুলো পাকিস্তানের কাছে ‘অপারেশনাল সুবিধা’ হিসেবে কাজ করেছে।
শিব কুমার বলেন, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর অনুমতি দেয়নি। এর ফলে, পাকিস্তান আগ্রাসী হয়ে ওঠে এবং তা ভারতের জন্য ক্ষতির কারণ হয়। তিনি জানান, “পরে আমরা কৌশল পরিবর্তন করি। প্রথমে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিস্ক্রিয় করি এবং তারপর ব্রাহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালাই।”
এর আগেই পাকিস্তান দাবি করেছিল, ৭ মে রাতে হওয়া সংঘর্ষে ছয়টি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে তারা। এদের মধ্যে রয়েছে তিনটি ফ্রান্সের তৈরি অত্যাধুনিক রাফালে জেট, যা ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষায় বড় সংযোজন ছিল। যদিও ভারত এতদিন এ দাবিকে গুজব ও অপপ্রচার হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছিল।
ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, “সরকার প্রকৃত ক্ষতির তথ্য গোপন করেছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করেছে। ‘অপারেশন সিদুঁর’-এর প্রকৃত চিত্র জানা উচিত জনগণের।”
এই আকাশযুদ্ধের পেছনে ছিল কাশ্মীরের পাহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনা, যাতে অন্তত ২৬ জন নিহত হন। ভারত সরাসরি এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে, যদিও ইসলামাবাদ তা ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ বলে প্রত্যাখ্যান করে।
এই ঘটনার পরপরই ভারত পাকিস্তানের সিয়ালকোট, বাহাওয়ালপুর এবং আজাদ কাশ্মীরসহ ছয়টি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান তাদের শক্তিশালী এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম সক্রিয় করে এবং পাল্টা আক্রমণ শুরু করে, যা শেষ পর্যন্ত বিমান ভূপাতিত হওয়া এবং ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে গড়ায়।
দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এই সাম্প্রতিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একদিকে রাজনৈতিক নির্দেশনায় সীমাবদ্ধ ভারতীয় বাহিনী, অন্যদিকে কৌশলে এগিয়ে থাকা পাকিস্তান—এ ধরনের পরিস্থিতি উপমহাদেশের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি।
একটি স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে ভারতের যুদ্ধক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে এল। এতে বোঝা যাচ্ছে, দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তি ভারসাম্যের প্রতিযোগিতা নতুন মোড় নিচ্ছে। রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা, অপারেশনাল গাফিলতি এবং তথ্য গোপনের কৌশল—সবকিছু মিলিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এখন দেখার বিষয়, এই স্বীকারোক্তির পর মোদি সরকার কী ব্যাখ্যা দেয় এবং ভবিষ্যতে কৌশলগত অবস্থানে কী পরিবর্তন আনে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ইতোমধ্যেই এই ঘটনার কূটনৈতিক সুবিধা নিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সক্রিয় হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ