
ছবি: সংগৃহীত
অর্থবছরের শেষ দিনে এসে দেশের রাজস্ব সংগ্রহ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের অগ্রগতি দেখা গেছে। সোমবার (৩০ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মোট ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের তথ্য জানিয়েছে। এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
রাজস্ব খাতে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা অচলাবস্থা, এনবিআর কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি, কমপ্লিট শাটডাউন ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এই পরিমাণ রাজস্ব আদায়কে অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে, রবিবার বিকাল থেকেই কর্মকর্তাদের কাজে ফেরা এবং কাস্টমস হাউজগুলোতে স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়ায় শেষ দিনে রাজস্ব সংগ্রহে গতি ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
সোমবার সকালে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “গতকাল বিকেল থেকেই কাস্টমস হাউজগুলোতে কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে। কর্মবিরতি প্রত্যাহারের কারণে কেবল রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের মাঝেই নয়, নীতিনির্ধারক এবং ব্যবসায়ী মহলেও স্বস্তির অনুভূতি তৈরি হয়েছে। সকাল থেকে আমাদের সব দপ্তরে স্বাভাবিক কার্যক্রম চলছে—ভ্যাট অফিস, কর অফিস, কাস্টমস হাউজ, আইসিডি—সব জায়গায় উপস্থিতি শতভাগ।”
তিনি বলেন, “গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায় যে বেশি হবে, সেটা নিশ্চিত। তবে আমরা যে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছিলাম, কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। বিগত দেড় মাসের আন্দোলন, কর্মবিরতি, শাটডাউন এসব কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যও ব্যাহত হয়েছে। যার প্রভাব সরাসরি রাজস্ব আদায়ে পড়েছে।”
রাজস্ব আদায়ের চূড়ান্ত হিসাব এখন আইবাস (iBAS++) সিস্টেমের মাধ্যমে করা হচ্ছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “আগে যেমন ম্যানুয়াল রিপোর্টিং হতো, এনবিআর আর এক ফিগার বলত, বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটা—সেসব এখন নেই। এখন সবার রিপোর্ট একই। রাজস্ব আদায়ের প্রতিবেদন এখন সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হয়। এ কারণে রিকনসিলিয়েশন বা সমন্বয়ের প্রয়োজন পড়ে না।”
তিনি বলেন, “আজকের (৩০ জুন) দিনে আমাদের সাধারণত একটা বড় ড্রাইভ থাকে। রাজস্ব আদায়ের যে অর্থ পাইপলাইনে থাকে, সেটা আজই ট্রেজারিতে আনার চেষ্টা করা হয়। তাই আমাদের রাজস্ব কর্মকর্তারা আগে থেকেই জানেন—কে কোন সময়ে কর জমা দেয়, কারা বছরের শেষে দেয়। সে অনুযায়ী তারা কাজ করছেন। ব্যাংক ও সব অফিস আজ খোলা, যার ফলে অর্থ জমার হার ভালো হবে বলে আশা করছি।”
রাজস্ব আদায়ের মোট পরিমাণ এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “আজ সকালে (১০টা পর্যন্ত) আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। তবে সরকারি প্রকল্প বা প্রতিষ্ঠানের মূসক ও কর বিল চূড়ান্তভাবে জমা হতে একটু সময় লাগে। সাধারণত জুন মাসের ক্লোজিং হিসাব চূড়ান্ত হতে ২-৩ সপ্তাহ সময় লাগে। ফলে পুরো অর্থবছরের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি জানতে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করছি, আজ আরও বড় অঙ্ক জমা হবে। জুলাই মাসেও সরকারের ব্যয়ের প্রয়োজন রয়েছে, সে জন্য আবারও একটি ড্রাইভ চলবে যাতে করে দ্রুত অর্থ ট্রেজারিতে পৌঁছায়।”
উল্লেখ্য, সোমবার সকালে এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তারা তাদের দীর্ঘদিনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, ‘মার্চ টু এনবিআর’সহ সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে পুনরায় কাজে ফিরেছেন। দীর্ঘ প্রায় দেড় মাসের অচলাবস্থার পর এটি এনবিআরের কার্যক্রমে নতুন গতি নিয়ে এসেছে।
এনবিআর চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, “আমরা যে সংকটের মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেটা ভুলে গিয়ে এখন রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কাজ করার সময়। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের রাজস্ব প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে রেভিনিউ অফিসাররা যেমন নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন, এখনো তেমনটাই প্রত্যাশা করি।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কর্মতৎপরতা আগের মতোই চলবে। রাজস্ব আদায়ে কোথাও শৈথিল্য থাকবে না। সরকারের জুলাই মাসের খরচ চালাতে এখন থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। রাজস্ব আহরণে সকল কর্মকর্তাকে দায়িত্বশীল হতে হবে।”
চলতি অর্থবছরের শেষ দিনে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৩ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক বার্তা। যদিও কয়েক সপ্তাহের প্রশাসনিক অচলাবস্থার কারণে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণে কিছুটা ধাক্কা লেগেছে বলে এনবিআর স্বীকার করছে, তবে শেষ দিনের ড্রাইভ এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে ফেরায় নতুন করে আশাবাদ তৈরি হয়েছে। এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, জুলাই মাসে সেই গতি ধরে রাখা এবং অর্থবছরের শুরুতেই সরকারের ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় রাজস্ব নিশ্চিত করা। এনবিআর বলছে, তারা সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এসজে