
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরি খাতের কাঠামো ও নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ‘সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর প্রস্তাব চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়, যা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়বদলের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে। বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন এবং বিস্তৃত আলোচনার পর প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক সরকারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, "সরকারি চাকরি (দ্বিতীয় সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫"-এর খসড়াটি আইনি ও সংসদীয় দপ্তর—লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ—ভেটিং সম্পন্ন করার পর উপদেষ্টা পরিষদ তা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করেছে। অর্থাৎ অধ্যাদেশটি এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ও গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে, যার পর এটি কার্যকর আইন হিসেবে বাস্তবায়িত হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকার প্রশাসনিক সংস্কার ও জনসেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা সংশোধন করছে। সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও বেশ কিছু অভিযোগ, অনিয়ম ও সময়োপযোগী রূপান্তরের দাবি দীর্ঘদিন ধরেই ছিল। এই প্রেক্ষাপটে অধ্যাদেশ সংশোধনের এই উদ্যোগকে প্রশাসনিক দক্ষতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার একটি অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সরকারি চাকরি আইন সংশোধনের ফলে নিয়োগ, পদোন্নতি, চাকরিচ্যুতি, চাকরির মেয়াদ, শৃঙ্খলাবিধি এবং অবসরের বিষয়গুলোতে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে, তা এখনো বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়নি। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাদেশে কিছু মৌলিক পরিপূর্ণতা আনা হয়েছে, যার ফলে নিয়োগ প্রক্রিয়া হবে আরও স্বচ্ছ, শৃঙ্খলাবিধি হবে কঠোর, এবং চাকরিজীবীদের দায়বদ্ধতা বাড়বে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই সংশোধনের ফলে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ এবং চাকরির মেয়াদকালীন আচরণবিধি নিয়ে দীর্ঘদিনের কিছু অস্পষ্টতা ও প্রশাসনিক জটিলতা কাটবে। এতে কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্ব ও ন্যায়পরায়ণতা বৃদ্ধির সম্ভাবনাও তৈরি হবে।
জনপ্রশাসন বিশ্লেষক ড. হুমায়ুন কবির বলেন, "এই অধ্যাদেশ সংশোধন কেবল চাকরিজীবীদের ওপর শৃঙ্খলা আরোপ নয়, বরং এটি প্রশাসনের কাঠামো সংস্কারের একটি বড় পদক্ষেপ। এটি কার্যকর হলে জনগণের প্রতি সরকারি কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতাও বৃদ্ধি পাবে।"
এদিকে সংশোধনের বিষয়ে সরকারিভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না এলেও ধারণা করা হচ্ছে, নিয়োগ পরীক্ষার পদ্ধতি, পদোন্নতির মেধানির্ভরতা, শাস্তিমূলক ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ রোধে কার্যকর কিছু বিধান সংযোজন করা হয়েছে অধ্যাদেশে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, আইনটি কার্যকর হলে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয় মামলা, বারবার বদলি, রাজনৈতিক চাপ এবং প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অধ্যাদেশটি এখন রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর গেজেট আকারে প্রকাশিত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর হবে এবং সংশ্লিষ্ট সব সরকারি দপ্তরে নতুন বিধান অনুযায়ী কাজ শুরু হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রস্তুত করছে বলে জানা গেছে।
সব মিলিয়ে, এই অধ্যাদেশ সংশোধন সরকারি চাকরিতে নীতিগত সংস্কারের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে, যা প্রশাসনের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ